তারিখ : ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

মান্দায় প্রভাব বিস্তার করে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে স্বামী-স্ত্রীর অনিয়মের অভিযোগ

মান্দায় প্রভাব বিস্তার করে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে স্বামী-স্ত্রীর অনিয়মের অভিযোগ
[ভালুকা ডট কম : ১৬ মার্চ]
জেলার মান্দা উপজেলার তেঁতুলিয়া ইউনিয়ন ‘স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র’ পরিদর্শিকা নাহিদ সুলতানা এবং তার স্বামী ডা. মোজাম্মেল হকের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিজেদের শিকড় গজিয়ে আধিপত্য বিস্তার করেছেন। ভয়ে অনেক রোগী কিছু বলার সাহস পায়না।

তাদের অনিয়মের কারণে এলাকাবাসীর মধ্যে এক ধরনের চাপাক্ষোভ বিরাজ করছে। স্বামী-স্ত্রী মিলে স্বাস্থ্য কেন্দ্রকে নিজেদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বনে গেছেন। এলাকাবাসী ওই পরিদর্শিকাসহ তার স্বামীকে অনত্র বদলীর দাবি জানিয়েছেন। মঙ্গলবার পরিবার পরিকল্পনা উপ-পরিচালকসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেন সন্তানহারা এক নবজাতকের বাবা সাজ্জাদ হোসেন বাদশা।

সরেজিমনে জানা যায়, ১৯৯৫ সালে পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা হিসেবে যোগদান করেন নাহিদ সুলতানা। এরপর ২০০৭ সালে তার স্বামী ডা. মোজাম্মেল হক ওই স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে সাব অ্যাসিসটেন্ট কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার(এসএসিএমও) পদে যোগদান করেন। এরপর থেকে স্বামী এবং স্ত্রী মিলে স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় ওই স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করতে থাকেন। নিজেদের খেয়ালখুশি মতো কার্যক্রম চালিয়ে যেতে থাকেন।

কর্মস্থলে যোগদানের পর থেকে আজ পর্যন্ত বেশ কয়েকবার নাহিদ সুলতানার ট্রান্সফার অর্ডার আসে। কিন্ত রাজনৈতিক আর্শিবাদপৃষ্ঠ ও ক্ষমতার বলে ট্রান্সফার অর্ডারটি বাতিল করেন নাহিদ সুলতানা। এছাড়া স্বাস্থ্য কেন্দ্রের আশপাশের কিছু প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় এবং তাদের সহযোগীতায় বিক্ষোভ মিছিল করিয়ে নিয়ে ট্রান্সফার অর্ডারটি বাতিল করে নেন তিনি।

গর্ভবতীর চিকিৎসাসেবা বিনামূল্যে দেওয়ার কথা থাকলেও গর্ভবতী প্রসবের পর টাকা দাবী করেন এবং জোর পূর্বক সেটা আদায় করে থাকেন। এমনকি প্রসবের পর বাচ্চা মারা গেলেও কোন ছাড় নেই তার কাছ থেকে। গর্ভবতীদের কাছ থেকে সর্বনিন্ম ৫০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা আদায় করেন। এমনকি এর বেশিও টাকা নেওয়ার অভিযোগ আছে। তিনি দীর্ঘদিন থেকে ওই স্বাস্থ্য কেন্দ্রে থাকায় এবং আশপাশে সরকারি কোন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স না থাকায় সেবা নিতে আসা এলাকাবাসী জিম্মি হয়ে পড়েছে।

নিজের সুনাম রক্ষার্থে গর্ভবতীদের মাত্রাতিরিক্ত নরমাল ডেলিভারী করানোর চেষ্টা করেন। গর্ভবতীদের নরমাল ডেলিভারী করানো নিয়ে অনেক সময়ক্ষেপন করেন। এতে অনেক নবজাতক মায়ের গর্ভে মারা যায়। আবার অনেক গর্ভবতীদের অসময়ে রেফার্ড করা হলে রাস্তার মাঝেই নবজাতক মারা যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এছাড়া আশপাশের কোন বেসরকারি ক্লিনিক, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, নওগাঁ সদর হাসপাতালে নেওয়ার সময়ও তখন ফুরিয়ে যায়। যার ফলে অনেক বাবা-মা তার নবজাতকদের হারান। আর নিজেদের ভাগ্যে এমন আছে বলে আল্লাহর উপর ছেড়ে দেন।

নাহিদ সুলতানা পরিবারসহ স্বাস্থ্য কেন্দ্রের দ্বিতীয় তলা থাকেন। গর্ভবতীর স্বজনরা অনেক ডাকাডাকি করলে তিনি নিচে নেমে আসেননা। এছাড়া আয়া আনোয়ারা খাতুনকে দিয়ে ডেলিভারীর কাজ করিয়ে নেওয়া হয়। পেটের ব্যাথায় গর্ভবতী চিৎকার করলে আয়া অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে চড় থাপ্পড় দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

গত ৯মার্চ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে সকালে এক মৃত মেয়ে সন্তানের জন্ম দেন উপজেলার সাটইল গ্রামের অভিযোগকারীর স্ত্রী শারমিন সুলতানা। সন্তান জন্ম দেওয়ার আগে দুই বার সময় পরিবর্তন করা হয়েছে। শেষ তারিখে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে আসা হলে মৃত সন্তানের জন্ম হয়। কিন্তু নাহিদ সুলতানা দাবী করেন এক সপ্তাহ আগে নবজাতকটি মায়ের গর্ভে মারা গেছে। নরমাল ডেলিভারীর আশ্বাস দিলে গত ১০ মার্চ সকালে ভারশোঁ গ্রামের গর্ভবতী আলেনুর স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যান। পেটের ব্যাথা উঠানোর জন্য ইনজেকশন দেয়া হলে ১ ঘন্টার মধ্যে বাচ্চা হবে এমন আশ্বাস দেন। অথচ ৪ঘন্টায় চেষ্টার পরও প্রসব না হওয়ায় রেফার্ড করেন। এরপর জরুরি ভিত্তিত্বে নওগাঁ সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে সিজার অপারেশনের পর মৃত ছেলে সন্তানের জন্ম হয়।

জেলা পরিবার পরিকল্পনা পরিসংখ্যান অফিস সুত্রে জানা যায়, ওই স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে চলতি বছরের জানুয়ারীতে ১৪৫ জন, ফেব্রুয়ারীতে ১৪৭ জন নরমাল ডেলিভারী হয়। ২০১৬ সালে ডিসেম্বর ১৮২জন, নভেম্বর ১৭০ জন, অক্টোবর ১৬০জন, সেপ্টেম্বর ১৫৬, আগস্ট ১৪৫জন এবং জুলাই ১৫৬জন নরমাল ডেলিভারী হয়। তবে কতো নবজাতক মারা গেছেন এবং রেফার্ড করা হয়েছে তার হিসেব পরিসংখ্যানে নেই।  এ হিসেব থেকে দেখা যায় মাসে প্রায় ১ থেকে দেড় লাখ টাকা নাহিদ সুলতানা গর্ভবতীদের কাছ থেকে আদায় করে থাকেন।

অপরদিকে, ২০০৭ সালে ডা. মোজাম্মেল হক ওই স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে এসএসিএমও পদে যোগদান করেছেন। এরমধ্যে ২০১০ সালে একবার তিনি বদলী হয়েছেন। তদবীরের মাধ্যমে কিছুদিন পর তিনি আবারও সেখানে চলে আসেন। এছাড়া তিনি অফিস টাইমে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে বাহিরে গিয়ে টাকার বিনিময়ে রোগী দেখে আসেন। স্বাস্থ্য কেন্দ্রে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার পর টাকা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তাদের এ অনিয়মের কারণে এলাকাবাসীর অনেকেই স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সেবা ও চিকিৎসা নিতে আসেননা।

এসব অনিয়মের বিষয়ে কোন সদুত্তর দিতে পারেননি স্বামী-স্ত্রী। ঘটনাস্থল থেকে আসার পর বিভিন্ন দিক থেকে নিউজটি বন্ধ করার জন্য তদবির আসতে থাকে।সব অভিযোগ অস্বীকার করে নাহিদ সুলতানা বলেন, কিছু ঔষধপত্র কেনার জন্য গর্ভবতী বা তাদের আত্মীয়দের কাছ থেকে টাকা নিতে হয়। তবে ডেলিভারীর পর অনেকে খুশি হয়ে ইচ্ছে করেই টাকা দেন। ডা. মোজাম্মেল হক এসব বিষয় নিয়ে নিউজ না করার জন্য অনুরোধ করেন তিনি। নিউজ প্রকাশের পর অনেক তদন্ত আসবে এবং চাকুরির ক্ষেত্রে সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে বলে জানান তিনি।

অভিযোগকারী সাজ্জাদ হোসেন বলেন, এক সপ্তাহ আগেই যদি নবজাতকটি মারা যেত, তাহলে আমার স্ত্রীর তো বড় ধরনে শারীরিক সমস্যা হতে পারতো। পেট ফুলেফেঁপে যেত। প্রসবের সময় অনেক জোড়াজুড়ি করাই বাচ্চাটি মারা যায়। কিন্তু তারপরও তিনি জোর করে ১ হাজার টাকা নিয়েছেন। বাচ্চা প্রসবের সময় প্রায় এ ধরনের দূর্ঘটনা ঘটে। তার এ অনিয়মের বিষয়ে ব্যবস্থা হওয়া দরকার।

তেঁতুলিয়া কামারপাড়া গ্রামের রেখা বলেন, চিকিৎসা সেবাকে তারা এখন ব্যবসায় পরিনত করেছে। ওই স্বাস্থ্য কেন্দ্রে আমার বোন রাহেমাকে প্রসবের সময় মেয়ে বাচ্চাকে মেরে ফেলেছে। নাহিদ সুলতানাকে সেখান থেকে বিতাড়িত করা উচিত। এখন অনেকেই তার কাছে গর্ভবতীকে নিয়ে যেতে ভয়পায়।

মান্দা উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আ.ফ.ম আছফানুল আরেফিন বলেন, স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসা সেবার ক্ষেত্রে কোন টাকা নেওয়ার নিয়ম নেই। তবে অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

নওগাঁ পরিবার পরিকল্পনা উপ-পরিচালক ড. কুস্তরি আমিনা কুইন বলেন, এরকম কোন অভিযোগ আসেনি। এটা উপজেলার নিয়ন্ত্রনে। অভিযোগ পেলে দেখা যাবে।#



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

অনুসন্ধানী প্রতিবেদন বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৭ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই