তারিখ : ১৯ মার্চ ২০২৪, মঙ্গলবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

গৌরীপুুর ৮ ডিসেম্বর হানাদার মুক্ত দিবস

গৌরীপুুর ৮ ডিসেম্বর হানাদার মুক্ত দিবস
[ভালুকা ডট কম : ০৭ ডিসেম্বর]
০৮ ডিসেম্বর গৌরীপুুর মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাক হানাদার বাহিনী রাতেঁর আধারে গৌরীপুর ছেড়ে চলে গেলে শত্রুমুক্ত হয় গৌরীপুর। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের পর এপ্রিলের প্রথম দিকে গৌরীপুরে শুরু হয় পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রথম পর্যায়ের সংগ্রাম। তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা ও এমসিএ মরহুম হাতেম আলীর বাসভবনে এবং গৌরীপুর মহাবিদ্যালয়ের অধ্যাপক  সৈয়দ আলী হাসানের তত্ত্বাবধানে ১৭টি রাইফেল দিয়ে শুরু হয় প্রশিক্ষন। তাদেরকে সহযোগিতা করেন সেনাবাহিনীর ১জন অবসরপ্রাপ্ত সৈনিক মো. মমতাজ উদ্দিন।

১৯৭১ সালের ২৩ এপ্রিল কিশোরগঞ্জ থেকে রেল পথে পাক হানাদার বাহিনী গৌরীপুরে প্রবেশ করে। হানাদার বাহিনী গৌরীপুরে প্রবেশ করেই শুরু করে হত্যা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ। ঐ দিন সকাল থেকেই পাকিস্থানী জঈী বিমান গৌরীপুরের আকাশে টহল দিয়ে থেমে থেমে আকাশ থেকে রেল ষ্টেশন, কলেজসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ন স্থাপনা লক্ষ্য করে গুলি বর্ষন করে । হানাদার বাহিনী গৌরীপুর শহরে প্রবেশ করেই কালীপুর মোড়ে গুলি করে হত্যা করে স্কুল শিক্ষক ব্রজেন বিশ্বাসকে। ব্রজেন্দ্র বিশ্বাস গৌরীপুরে হানাদার বাহিনীর হাতে প্রথম শহীদ হলেও শহীদদের তালিকায় তার নাম উঠেনি। পাক হানাদার বাহিনী গৌরীপুর দখলের পর মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটে যায়। একে একে সবাই ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিব বাড়ীতে আশ্রয় নেয় এবং ট্রেনিং নিতে শুরু করেন। এদিকে গৌরীপুরে পাক হানাদার বাহিনী সাধারন মানুষের উপর চালায় নির্মম অত্যাচার।

১৬ মে সকালে পাক হানাদার বাহিনী শালীহর গ্রাম থেকে ধরে নিয়ে যায় বিশিষ্ট ক্রীড়া সংগঠক মধু সুদন ধরকে এবং শহর থেকে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী কৃষ্ণ সাহাকে। তারা আজো ফিরে আসেনি। আগষ্ট মাসে গৌরীপুরে অবস্থানরত পাক বাহিনীর উপর হামলা শুরু করে প্রশিক্ষন প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধারা। তারা হানাদারদের চলাফেরা ও যোগাযোগ ব্যর্থ করে দিতে বিস্ফোরক দিয়ে উড়িয়ে দেয় যোগাযোগের মাধ্যম টেলিফোন এক্সচেঞ্জ ও রেল সেতু এবং অগ্নিসংযোগ করে ধ্বংস করে রেলষ্টেশন ও পাট গুদাম। মুক্তিযোদ্ধাদের চোরাগোপ্তা হামলায় পাক বাহিনী ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে এবং শালীহর গ্রামে প্রবেশ করে গনহত্যা শুরু করে। সেখানে ১৩ জনকে গুলি করে হত্যা করে এবং ধরে নিয়ে যায় মুক্তিযোদ্ধা মরহুম আবুল হাসেমের পিতা ছাবেদ হোসেনকে। মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে ৩০ নভেম্বর পলাশ কান্দায় পাকহনাদার বাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন জসিম উদ্দিন, সিরাজুল ইসলাম, আনোয়ারুল ইসলাম মনজু ও মতিউর রহমান। শ্যামগঞ্জে শহীদ হন সুধীর বড়ুয়া।

অবশেষে ডিসেম্বরের প্রথম দিকে গৌরীপুর শহর ছাড়া সমস্ত এলাকা মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে চলে আসে। মুক্তিযোদ্ধাদের হামলায় পাক হানাদার বাহিনী ৭ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে শহর ছেড়ে রেল যোগে গৌরীপুর থেকে পালিয়ে যায়। ওইদিন রাতেই মুক্তিযোদ্ধা কোম্পানী কমান্ডার রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে আবুল কালাম আজাদ, আঃ হেকীম, নজরুল ইসলাম, সোহরাব, ছোট ফজলু, আনসার, কনুসহ একদল মুক্তিযোদ্ধার কাছে গৌরীপুর থানায় অবস্থানরত পুলিশ ও রাজাকাররা আত্মসমর্পন করে। এই খবর মুহুর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে শহরের মুক্তি পাগল মানুষ জয় বাংলা ধ্বনিতে গৌরীপুরের আকাশ মুখরিত করে তোলে এবং প্রানঢালা অভিন্দন জানিয়ে বরণ করে নেয় বাংলার দুর্জয় সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের। স্বাধীনতার অংশ হিসেবে হানাদার মুক্ত হয় গৌরীপুর।

গৌরীপুরের মুক্তিযুদ্ধে যাদের উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে তাদের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক মরহুম হাতেম আলী মিয়া (এমসিএ), মরহুম ডাঃ এম এ সোবহান, মরহুম মোঃ খালেদুজ্জামান, যুদ্ধকালীন ১১নং সাব-সেক্টর কমান্ডার মরহুম তোফাজ্জল হোসেন চন্নু ও মুজিব বাহিনীর কমান্ডার মরহুম মজিবুর রহমানের নাম অন্যতম। দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে উপজেলা প্রশাসন, স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের উদ্যোগে বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহন করা হয়েছে। #



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

জীবন যাত্রা বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৬ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই