তারিখ : ১৯ মার্চ ২০২৪, মঙ্গলবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

ভালুকায় সৌদি খেজুর চাষে কোটিপতি মোতালেব

কৃষিতে বিপ্লব আনতে পারে সৌদি খেজুর
ভালুকায় সৌদি খেজুর চাষে কোটিপতি মোতালেব
[ভালুকা ডট কম : ১৭ জুলাই]
সৌদি খেজুরের চাষাবাদ বাংলাদেশের কৃষিতেও বিপ্লব আনতে পারে প্রমান করে দেখালেন ভালুকার পাড়াগাঁও গ্রামের সৌদি ফেরৎ যুবক আঃ মোতালেব। এলাকায় খেজুর মোতালেব নামে পরিচিত আঃ মোতালেব তার বাড়ী সংলগ্ন মাত্র ৭০ শতাংশ জমিতে ২০০১ সালে সৌদি খেজুরের বীজ বপনের মাধ্যমে সম্পুর্ণ নিজস্ব প্রযুক্তিতে সৌদি খেজুর চাষ করে কয়েক বছরের ব্যবধানে ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে আজ তিনি কোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন। তবে এজন্য তাকে রাতদিন হাড়ভাঙ্গা খাটুনি খাটতে হয়েছে। শুনতে হয়েছে নানা জনের হাসি তামাসা ভরা নানা কথা। কিন্তু তিনি হাল ছাড়েননি।

১৬ জুলাই পাড়াগাঁও গ্রামে মোতালেবের গড়েতোলা মোফাজ্জল-মিজান সৌদিয়া খেজুর বাগানে গিয়ে দেখা যায় সারি সারি ছোট বড় খেজুর গাছে ঝুলে রয়েছে নয়ন জুরানো মনলোভা কাঁচা পাকা খেজুরের কাঁদি। মোতালেব তার সারা বাগানের বিভিন্ন জাতের খেজুরের সাথে পরিচয় করান। বাগানে একটি গাছে লাল রং ধারন করে রয়েছে বড় লম্বা আকৃতির খেজুর নাম আজুয়া। ছোট বড় অনেক গাছে এ জাতের খেজুর ধরেছে। আরেকটি গাছে তার চেয়েও বড় আকৃতির খেজুর নাম আমবাগ। ছোট আকারের আরেকটি গাছে সুকারী জাতের খেজুরের কাঁদি মাটি ছুঁই ছুঁই করছে। খেজুরের কাঁদিগুলো পলিথিনে ঢেকে রাখা হয়েছে কাক পক্ষীর হাত হতে বাঁচানোর জন্য। বয়স্ক উঁচু গাছে উঠার জন্য চারিদিকে লোহার এ্যাংগেল দিয়ে মাচা করে তাতে সিড়ি করেছেন সহজে গাছ থেকে খেজুর পারার জন্য। এটি তার নিজস্ব পদ্ধতিতে তৈরী। প্রতিটি মাচা তৈরী করতে খরচ হয়েছে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকার মত।

আঃ মোতালেব জানান তিন বছর সৌদি আরবে থাকাকালীন সেখানকার একটি খেজুর বাগানে চাকরি করে খেজুর চাষে অভিজ্ঞতা অর্জণ করেন। ২০০০ সালে দেশে ফিরার সময় সৌদি আরব থেকে বিভিন্ন জাতের সৌদি খেজুরের বীজ নিয়ে আসেন। পরবর্তীতে ২০০১ সালে বাড়ী সংলগ্ন ৭০ শতাংশ জমিতে বীজ বপনের মাধ্যমে শুরু হয় সৌদি খেজুরের আবাদ। ২৭৫ টি গাছের মধ্যে তিন বছরের মাথায় দুটি গাছে প্রথম খেজুর আসে। এলাকার মানুষ আগ্রহ ভরে তার বাগানের ছোট গাছে সৌদি খেজুর দেখতে ভীড় জমায়। বাগানের পরিচর্যা পানির ব্যবস্থা ও নিরাপত্তা প্রাচীর তৈরী করতে তার কয়েক লক্ষ টাকা ব্যায় হয়ে যায়। চারিদিকে খবর ছড়িয়ে গেলে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আগ্রহী লোকেরা চারা কিনতে আসে। চারা বিক্রির টাকায় তিনি বাগানের উন্নয়ন সহ সংসারের নানা চাহিদা পুরনে সমর্থ হন। তিনি জানান ছোট আকৃতির প্রতিটি চারা ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা, ফলধারক একটি গাছ ১ লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করে থাকেন। তার বাগানে বর্তমানে ১২ শ ছোটবড় গাছ রয়েছে। এর মধ্যে ৭০/৮০ টি গাছে এ বছর খেজুর ধরেছে। প্রতিটি পুর্ণ বয়স্ক গাছে  ১২ থেকে ১৩ টি কাঁধি হয়। প্রতিটি কাঁধিতে ১০ থেকে ১২ কেজি খেজুর পাওয়া যায়।

আজুয়া জাতের খেজুর প্রতি কেজি ২ হাজার টাকা, আমবাগ প্রতি কেজি ২ হাজার টাকা, সুকারী ১ হাজার ৫শ টাকা, বরকি ১ হাজার ৫শ টাকা কেজি বিক্রি হয়। তিনি জানান তার বাগানে উৎপাদিত খেজুর সৌদি খেজুরের চেয়েও মিষ্টি ও জাত ভেদে আকার আকৃতিতে বড় হওয়ায় চাহিদা অনেক। তিনি এক সময় স্ত্রী সন্তান নিয়ে মাটির ঘরে বসবাস করতেন। খেজুর বাগান হতে আয়কৃত টাকায় তিনি দ্বিতল বিল্ডিং বাড়ী করেছেন, ৬ বিঘা জমি ক্রয় করেছেন যার মূল্য বর্তমানে কোটি টাকার উপরে। তার সাফল্যের জন্য স্ত্রী মজিদা আক্তার সমান অংশীদার। সব সময় পাশে থেকে রাতদিন তাকে সাহায্য করেছেন। বড় ছেলে মোফাজ্জল এইচ এস সি পাশ করেছেন, ছোট ছেলে মিজান নবম শ্রেণীতে লেখা-পড়া করছে। মেয়ে মর্জিনার বিয়ে দিয়েছেন। সংসারে এখন সুখ সাচ্ছন্দে ভরপুর।

তিনি জানান এ পর্যন্ত কৃষি বিভাগের কোন পরামর্শ কিংবা সহযোগিতা পাননি। সরকারী সাহায্য সহযোগিতা পেলে তার বাগানটি আরও বিস্তৃত ও উৎপাদন মুখী করে বাংলাদেশের কৃষিতে সৌদি খেজুরের আবাদ সর্ব স্তরের কৃষকের মাঝে বিস্তার ঘটানো সম্ভব হবে। তার মতে বাংলাদেশের মাটি ও আবহাওয়া সৌদি জাতের সব রকম খেজুর উৎপাদনের জন্য উপযুক্ত। তবে উঁচু সমতল বন্যামুক্ত ভূমিতে খেজুর গাছ ভাল হয়।

ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা, ত্রিশাল, গফরগাঁও, ফুলবাড়িয়া, হালুয়াঘাট, গাজীপুর জেলার শ্রীপুর, টাঙ্গাইলের সখিপুর, মধুপুর এলাকায় সৌদি খেজুর চাষের জন্য উপযুক্ত টেক টিলা চালা ও সমতল ভূমি রয়েছে। এসব এলাকার চাষীদেরকে সৌদি খেজুর চাষে উদ্বুদ্ধ করতে পারলে কৃষিতে সৌদি খেজুর চাষে ব্যাপক সারা জাগিয়ে বিপ্লব ঘটানো সম্ভব। আঃ মোতালেব একজন সফল সৌদি খেজুর চাষী হিসেবে মনে করেন সরকারের কৃষি বিভাগ আন্তরিক হয়ে সৌদি খেজুর আবাদ সম্পর্কিত প্রযুক্তিগত তথ্যাদি দিয়ে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করলে এক সময় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অন্যান্য অর্থকরী ফসলের সাথে এটিও সমৃদ্ধ কৃষিপন্য হিসেবে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানী সম্ভব হবে।

মৌসুমী ফলের মধ্যে যেমন আম, কাঠাল, লিচু, আনারস, মালটা, কমলা, লটকন, বারোমাসি কলা, পেপে ইত্যাদি সকলের পছন্দের  খাদ্য তালিকায় থাকলেও এসব ফল ফ্রিজিং বা হিমাগার ছারা সংরক্ষন সম্ভব নয়। খেজুর অত্যন্ত স্বাস্থ্যপযোগী ফল এ সবের মধ্যে অন্যতম যা হিমাগার ছারাই সারা বছরের জন্য সংরক্ষন করে রাখা সম্ভব।#



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

ভালুকা বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৬ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই