বিস্তারিত বিষয়
পেটেন্ট আইনের মার প্যাচে হাত ছাড়া হচ্ছে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী পণ্যের স্বত্ব
পেটেন্ট আইনের মার প্যাচে হাত ছাড়া হচ্ছে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী পণ্যের স্বত্ব
[ভালুকা ডট কম : ০৭ সেপ্টেম্বর]
বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী পণ্যে জামদানি । যুগ যুগ ধরে বাংলাদেশের জামদানি নামেই বিশ্বব্যাপী সমাদৃত হয়ে আসছে। বিশ্বব্যাপী এই হস্তশিল্প পণ্যটির চাহিদা অনেক।
অবাক করার মত বিষয় হচ্ছে বাংলাদেশে এই পণ্যটির কোন পেটেন্ট (উৎপত্তি বা মালিকানা স্বত্ব) নেই। জামদানির প্রধান ক্রেতা প্রতিবেশী দেশ ভারত এখন এর প্যাটেন্ট সনদের মালিক।
মূলত নতুন আবিষ্কৃত পণ্যের ক্ষেত্রে পেটেন্ট দেয়া হয়। কিন্তু জামদানি বাংলাদেশের নির্দিষ্ট এলাকার ঐতিহ্য বহন করে বিধায় পেটেন্টে-এর পরিবর্তে জিআই আইন অনুযায়ী স্বত্ব পেতে পারে। এই আইনটি এখনো বাংলাদেশে নেই। তবে আইনটির খসড়া বর্তমানে মন্ত্রণালয়ে রয়েছে।কত দিনে আলোর মুখ দেখবে তা তারাই জানে না।
সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের যুক্তি হচ্ছে প্রতিবেশী দেশ পেটেন্ট নিলেও আমাদের ভয়ের কিছু নেই। ওরা নিয়েছে ' উপ্পাদা জামদানি ' নামে। আমাদের জামদানি বিশ্বব্যাপী ‘জামদানি’ নামে পরিচিত। কেউ চাইলেই আমাদের জামদানির সুনাম নিয়ে নিতে পারবে না। এ খোঁড়া যুক্তি দিয়ে ঐতিহ্যকে কত দিন ধরে রাখা যাবে তা তারাই জানে।
ফজলি আমও হাতছাড়া হলো বাংলাদেশের। বিশ্বজুড়ে পরিচিতি রাজশাহীর ফজলি আম। কিন্তু এ আমটির পেটেন্ট স্বত্ব নিয়েছে প্রতিবেশী দেশ ভারত। জানা গেছে সম্প্রতি বিশ্ববাণিজ্য সংস্থা (ডাব্লিউটিও) থেকে ফজলি আমের মালিকানা স্বত্ব ভারতকে দেওয়া হয়েছে । শুধু তা-ই নয়, বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার কাছে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী নকশিকাঁথার মালিকানা স্বত্বও দাবি করে রেখেছে ভারত। পশ্চিমবঙ্গের ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য হিসেবে তালিকাভুক্ত করে নকশিকাঁথাকেও নিজস্ব পণ্য হিসেবে নিবন্ধনের জোর চেষ্টা চালাচ্ছে তারা।
বাংলাদেশের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তথা সরকারের নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে জামদানি শাড়ির পর ফজলি আমের স্বত্বও আদায় করে নিয়েছে প্রতিবেশী দেশ । এর আগে নিমগাছের স্বত্ব নিয়ে গেছে যুক্তরাষ্ট্র। অন্য দেশের স্বত্ব নেওয়া পণ্যগুলো ভবিষ্যতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে উৎপাদন এবং আমদানি-রপ্তানি করতে গেলে স্বত্ব পাওয়া দেশকে রয়্যালটি দিতে হবে। এমনকি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এসব পণ্য স্বত্ব পাওয়া দেশগুলোর নিজস্ব বলেই বিবেচিত হবে।
অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে ভবিষ্যতে আমরা ফজলি আম খেতে চাইলে ভারতকে ট্যাক্স (রয়্যালটি) দিয়ে খেতে হবে। এর আগে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী জামদানি শাড়ি ও নিমগাছের মালিকানা স্বত্ব হাতছাড়া হয়ে গেছে। জামদানির পর এবার ফজলি আমের মালিকানাও ভারতের কাছে চলে গেছে।' 'এভাবে একের পর এক আমাদের ঐতিহ্যবাহী পণ্যের মালিকানা হাতছাড়া হলেও আইনের অভাবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কিছুই করতে পারছে না। ভৌগোলিক সূচক আইনের (জিআইএ) খসড়া তৈরি হয়েছে বহু আগে। এ আইন তৈরির দায়িত্ব শিল্প মন্ত্রণালয়ের। এ আইন ছাড়া বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষে কোনো উদ্যোগ নেওয়ার সুযোগ নেই।'
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার জিআইএ আইন ১৯৯৯-এর ২২, ২৩ ও ২৪ ধারার ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি রাইট অনুযায়ী, বিশ্বের প্রতিটি দেশের নিজেদের বিশেষ ঐতিহ্যবাহী ও বিখ্যাত পণ্য সংরক্ষণের অধিকার রয়েছে। এ জন্য নিজস্ব ঐতিহ্যবাহী ও বিখ্যাত পণ্যকে নিজস্ব জিআইএ আইনের অন্তর্ভুক্ত করতে হয়। কিন্তু শিল্প মন্ত্রণালয়ের এ ধরনের কোনো আইনই নেই। ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় 'ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (নিবন্ধন ও সংরক্ষণ) অধ্যাদেশ-২০০৮' নামের একটি খসড়া অধ্যাদেশ তৈরি করে এতে তিনটি মৎস্য পণ্য, ১২টি ফল, ১১টি প্রক্রিয়াজাত খাবার, আটটি শাকসবজি, ১৪টি কৃষিজাত পণ্যসহ মোট ৪৮টি খাদ্যপণ্য এবং খাদ্য বাদে ১৮টি পণ্য মিলিয়ে ৬৬টি পণ্যকে বাংলাদেশের জন্য ভৌগোলিক নির্দেশক হিসেবে চিহ্নিত করেছে। খসড়া তালিকায় জামদানি শাড়ি, ফজলি আম এবং নকশিকাঁথাকে বাংলাদেশের ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য হিসেবেই দেখানো হয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, ডাব্লিউটিওর ট্রেড রিলেটেড আসপেক্ট অব ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি রাইটসের (টিআরএআইপিআর) কাছে ভারত সরকারের জমা দেওয়া নিজস্ব পণ্যের তালিকায় বাংলাদেশি কিছু পণ্যও রয়েছে। এর মধ্যে জামদানি শাড়ির পর সম্প্রতি ফজলি আমের স্বত্ব পেয়েছে তারা। দেশটি ২০০৪ সালের এপ্রিল থেকে ২০০৯ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ১১৭টি পণ্যকে নিজস্ব ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য হিসেবে নিবন্ধনের জন্য দরখাস্ত করেছে। এর মধ্যে রয়েছে নকশিকাঁথাও। এর আগে ভারত অন্ধ্র প্রদেশের উপ্পাদা কোথাপল্লি মণ্ডলের বেশ কিছু গ্রামের তাঁতি সমাজ, দুটি নিবন্ধিত তাঁতিদের সংগঠন ২০০৯ সালে 'উপ্পাদা জামদানি' নামের জামদানি শাড়িকে তাদের নিজস্ব ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য হিসেবে নিবন্ধিত করে। পরে ডাব্লিউটিও থেকে জামদানির মালিকানা স্বত্বও পেয়ে যায় তারা। যদিও বাংলাদেশের জামদানি ও নকশিকাঁথা বিশ্বজুড়ে পরিচিত। অন্যদিকে রাজশাহী ঘেঁষা ভারত সীমান্তের মালদহে ফজলি আম হলেও ফজলি বলতে রাজশাহীর ফজলিকেই বোঝায়।
পেটেন্টের মারপ্যাঁচে হাত ছাড়া হচ্ছে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী পণ্যের স্বত্ব। বাংলাদেশের আমলাতান্ত্রিক জটিলতা।, কর্তৃপক্ষের খামখেয়ালিপনা ও বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে না পারার কারণে ভারত সুযোগ নিচ্ছে। হাতিয়ে নিচ্ছে আমাদের ঐতিহ্যের সব পণ্যের প্যাটেন্ট বা জিআই আইন অনুযায়ী মালিকানা স্বত্ব । ঐতিহ্যের বিষয়টি যেখানে জড়িত সেখানে দুদেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সুরাহা করা এখনিই জরুরী বলে বোদ্ধারা মনে করছেন।
সতর্কীকরণ
সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।
কমেন্ট
কলাম বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
- অতিরিক্ত ভালোবাসা ঠিক নয় [ প্রকাশকাল : ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ ০৬.০৫ পুর্বাহ্ন]
- আমার এলোমেলো ভাবনা ষষ্ঠ পর্ব -হাজী সানি [ প্রকাশকাল : ২১ জুন ২০২০ ০৬.৫৯ অপরাহ্ন]
- মানুষকে সদাসর্বদাই আপন করে নেওয়ার ইচ্ছা পোষণ [ প্রকাশকাল : ২১ জুন ২০২০ ০৬.৫৩ অপরাহ্ন]
- আমার এলোমেলো ভাবনা পঞ্চম পর্ব-হাজী সানি [ প্রকাশকাল : ০৮ এপ্রিল ২০২০ ০৬.১৮ অপরাহ্ন]
- করোনা ভাইরাস নিয়ে দুটি কথা-ইসরাফিল আলম এমপি [ প্রকাশকাল : ২৪ মার্চ ২০২০ ০৯.১১ অপরাহ্ন]
- স্বাধীনতার গুরুত্ব ও তাৎপর্য বিশ্লেষণে আজকের বাংলাদেশ [ প্রকাশকাল : ০৫ মার্চ ২০২০ ১০.২৬ অপরাহ্ন]
- বাঙালির জাতীয় জীবনে গৌরবময় দিন ২১ ফেব্রুয়ারী [ প্রকাশকাল : ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২০ ০৪.৩০ অপরাহ্ন]
- সৃষ্টিকর্তার সেই মানুষ আর এ মানুষ,আসল মানুষ ক'জনা [ প্রকাশকাল : ২০ অক্টোবর ২০১৯ ০৫.০০ অপরাহ্ন]
- আমার এলোমেলো ভাবনা চতুর্থ পর্ব-হাজী সানি [ প্রকাশকাল : ৩১ জুলাই ২০১৮ ০৬.৩০ পুর্বাহ্ন]
- আমার এলোমেলো ভাবনা তৃতীয় পর্ব-হাজী সানি [ প্রকাশকাল : ০৩ মার্চ ২০১৮ ০৭.৩০ পুর্বাহ্ন]
- বিজ্ঞাপন শিল্পে বাংলাদেশ এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় [ প্রকাশকাল : ০৪ ফেব্রুয়ারী ২০১৮ ০৯.৫০ অপরাহ্ন]
- আমার এলোমেলো ভাবনা দ্বিতীয় পর্ব-হাজী সানি [ প্রকাশকাল : ১৭ জানুয়ারী ২০১৮ ০২.০০ পুর্বাহ্ন]
- প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়ন ও সমকালীন ভাবনা [ প্রকাশকাল : ০৭ অক্টোবর ২০১৭ ১১.০৩ অপরাহ্ন]
- ভূমি দালাল থেকে ভূমিদুস্য পরে শিল্পপতি এখন রাজনীতিবিদ-হাজী সানি [ প্রকাশকাল : ১৯ আগস্ট ২০১৭ ১০.০০ পুর্বাহ্ন]
- দয়া করে খাবার অপচয় বন্ধ করুন [ প্রকাশকাল : ১০ জুলাই ২০১৭ ১১.১০ অপরাহ্ন]