তারিখ : ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

ভালুকার বানিজ্যিক কুমির খামার

ঘুরে দাড়িয়েছে ভালুকার বানিজ্যিক কুমির খামার
[ভালুকা ডট কম : ০৮ জানুয়ারী]
বনাঞ্চল বেষ্টিত ভালুকার হাতিবের গ্রামে গড়ে উঠা রেপটাইলস ফার্ম লিমিটেড নামের বানিজ্যিক কুমির খামারটি বিপর্যয় কাটিয়ে পুনরায় ঘুরে দাড়িয়েছে। মালিকানা বদলের কারনে মাঝপথে কুমিরের খাদ্যাভাব ও পরিচর্যার অভাবে সাময়িক বিপর্যয় নেমে আসে খামারটিতে।

ভালুকার হাতিবের র‌্যাপটাইলস ফামর্ হতে হিমায়িত কুমির, চামড়া, রপ্তানী করে কয়েক বছরে আয় করেন কোটি কোটি টাকা। ঢাকা হতে ৮৪ কিলোমিটার উত্তরে আর ময়মনসিংহ জেলা শহড় থেকে ৩৬ কিলোমিটার দক্ষিনে ভালুকার ভরাডোবা বাসস্ট্যান্ড। এখান থেকে ঘাটাইল সড়কে ১৫ কিলোমিটার পশ্চিমে উথুরা বাজার পার হয়ে হাতিবের গ্রামে গেলে হাতের বামে অনুমান দুইশত গজ দক্ষিনে প্রাচীর ঘেরা রেপটাইলস ফার্ম লিমিটেড নামে গড়ে উঠেছে বানিজ্যিক ভিত্তিতে কুমির চাষ প্রকল্প। ওই ফার্মে গেলে দেখাযায়  বিশেষ ভাবে তৈরী ছোট বড় পুকুরে বিভিন্ন বয়সের কুমির রাখা আছে। বড় আকৃতির বয়স্ক কুমিরগুলি পানি থেকে উপরে উঠে হা করে রোদের তাপ নিচ্ছে। এক পাশে রাখা আছে অসংখ বাচ্চা কুমির। বেশ কয়েকটি শেডে ছোট ছোট পন্ড তৈরী করে নেট দিয়ে বিশেষ পদ্ধতিতে আলাদা করে রাখা হয়েছে রপ্তানীর জন্য বাছাই করা কুমির।

কথা হয় ফার্ম ম্যানেজার আবু সাইম মোহাম্মদ আরিফ হোসেনের সাথে। তিনি জানান ২০০৩ সালে ভালুকা উপজেলার উথুরা ইউনিয়নের নিভৃত পল্লীর এই হাতিবের গ্রামে আড়াই কোটি টাকা ব্যায়ে ১৩ একর জমির উপর মেজবাউল হক ও মোস্তাক আহম্মেদ র‌্যাপটাইল ফার্ম নামে কুমির খামারটি গড়ে তোলেন। ৪ একর জমির মাটি কেটে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কুমিরের বাসউপযোগী ১৪ টি পুকুর কেটে তলদেশ পাকা ও ৩ ফুট উঁচু প্রাচীর উপরে কাঁটাতারের বেড়া দেয়া হয়। ২০০৪ সালের ৫ মে বন ও পরিবেশ মন্ত্রনালয়ের অনুমোদন লাভের পর আন্তর্জাতিক সংস্থা সি আই টি ই এস এর অনুমোদন সাপেক্ষে ওই বছর ডিসেম্বর মাসে মালেশিয়ার সারওয়াত হতে ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী ৭ থেকে ১২ ফুট লম্বা ১৫ টি পুরুষ সহ ৭৫ টি কুমির আমদানী করা হয়। এর মধ্যে ১ টি কুমির আবহাওয়ার তারতম্যের কারনে মারা যায়। ৭৫ টি কুমির দিয়ে শুরু করা ফার্মটি হতে কয়েকবার রপ্তানী করার পরও কুমিরের সংখ্যা বাড়তে থাকে। ২০১০ সালে ৬৭ টি হিমায়িত কুমির দেড় কোটি টাকায় জার্মানীতে রপ্তানী করা হয়। ২০১৪ হতে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ১৫০৭ টি কুমিরের চামড়া জাপানে রপ্তানী করে সারে ৭ কোটি কোটি টাকা আয় করেছেন। এছারাও প্রথমবার এ ফার্ম হতে মাংস, চামড়া,দাত ও হাড় রপ্তানী করে ৫ কোটি টাকা আয় করেন। আগামীতে এ ফার্ম হতে বছরে ১৫ কোটি টাকা রপ্তানী আয় সম্ভব হবে। বর্তমানে খামারে ৭ টি শেড, ১০টি হ্যাচারীতে ছোট বড় ৩ হাজার কুমির রয়েছে। এর মধ্যে ১৯ টি কুমির থেকে ১ হাজার ডিম সংগৃহিত হওয়ার পর ইনকিউবেটরে রেখে বাচ্চা ফুটানো হয়। কুমিরের বাচ্চাদের প্রতিদিন খাবার দিতে হয় আর বড়গুলি সপ্তাহে একদিন খাবার খায়। এরা বর্ষাকালে প্রজননে মিলিত হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে ডিম দেয়া শুরু করে। প্রতিটি কুমির ২০ থেকে ৮০ টি পর্যন্ত ডিম দিয়ে থাকে। ডিম সংগ্রহ করে বাচ্চা ফুটানোর জন্য ইনকিউবেটরে রাখা হয়। পরে বাচ্চা গুলি ছোট পুকুরে স্থানান্তর করা হয়। পুরুষ কুমিরের চামড়ার কদর বেশী। এদের বয়স দুই বছর পুর্ণ হলে চামড়া বিক্রয়োপযোগী হয়। মুরগীর মাংসের পাশাপাশি. গরুর মাংস ও মাছ খাবার হিসেবে কুমিরকে দিতে হয়। ফার্মটি গড়ে তোলার শুরুতে ৩৬ শতাংশ মেজবাউল হক, ১৫ শতাংশ মোস্তাক আহম্মেদের ও বাকি ৪৯ শতাংশ বাংলাদেশ ব্যাংকের ই ই এফ প্রকল্পের ঋণ নেয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শেয়ার ছিল ৪৯ শতাংশ। আর্থিক সংকটের কারনে ফার্ম পরিচালনায় ব্যঘাত ঘটলে ২০১২ সালে সকল শেয়ার কিনে নেন প্রশান্ত কুমার উরফে পিকে হালদার। তিনি দায়িত্ব নেয়ার পর ফার্মের নামে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান হতে বিপুল পরিমান ঋণ গ্রহন করেন। খেলাপি ঋণ ও অর্থ পাচারের অভিযোগে পিকে হালদারের ব্যাংক একাউন্ট জব্দ করা হলে সংকটে পরে যায় কুমির খামারটি। খাদ্য সংকট ও পরিচর্যার অভাবে ২০২০/২১ সালে এক হাজারের উপরে কুমির মারা যায়। যে কারনে খামারটি ব্যাপক অনিশ্চয়তার মধ্যে লোকসানে পরে যায়। পরবর্তীতে উচ্চ আদালতের মাধ্যমে গঠন করে দেয়া খামার পরিচালনা কমিটি দায়িত্ব নেয়ার পর নব উদ্যমে কাজ শুরু হওয়ায় নতুন করে ঘুরে দাড়িয়েছে কুমির খামারটি।

বর্তমানে খামারটির আয়তন দাড়িয়েছে ২১ একর জমির উপর। রপ্তানীযোগ্য ৬০০ কুমির সহ বর্তমানে খামারটিতে ছোটবড় মিলিয়ে ৩০০০ কুমির রয়েছে। রপ্তানীযোগ্য কুমিরগুলি আলাদা শেডে রাখা হয়। র‌্যাপটাইলস ফার্ম ময়মনসিংহ ব্যবস্থাপনা পরিচালক এনাম হক জানান হাউজ থেকে তুলে এনে কুমিরের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে অসুস্থ কুমিরগুলিকে এন্টিবায়েটিক ও প্রয়োজনীয় ঔষধ দিয়ে চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ্য করে তোলা হয়। ফার্ম কর্তৃপক্ষ জানান হিমায়িত কুমির ও চামড়া রপ্তানী হলেও কুমিরের মাংস,দাঁত ও বায়োপ্রডাক্ট রপ্তানির অনুমতি মেলেনি এখনও পর্যন্ত। তাদের দাবী এ সবের অনুমতি পেলে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম খাত হতে পারে ভালুকার র‌্যাপটাইলস ফার্ম নামের এ কুমির খামারটি। প্রায় প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন অঞ্চল হতে পরিবার পরিজন নিয়ে দর্শনার্থীরা কুমির দেখতে ফার্মে এসে ভীড় করেন।#



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

ভালুকা বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৭ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই