তারিখ : ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

নওগাঁ-৬ সংসদীয় শূণ্য আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশিরা

এক সময়ের রক্তাক্ত জনপদে কে হচ্ছেন শান্তির বাহক,চলছে আলোচনা-সমালোচনা,সৎ, শিক্ষিত, নির্ভিক ও জনবান্ধব প্রার্থী প্রত্যাশা ভোটারদের
[ভালুকা ডট কম : ৩১ জুলাই]
দেশের গন্ডি পেরিয়ে সারা বিশ্বে এক সময় রক্তাক্ত জনপদ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিলো জেলার রাণীনগর ও আত্রাই উপজেলা। সেই সময় এই জনপদে সর্বহারারা দিনে-দুপুরে মানুষকে জবাই করতো। সর্বহারার অধ্যায় শেষ করতেই উত্থান হয় জেএমবি নামক বাংলা ভাইয়ের। দীর্ঘদিন চলে তাদের নিমর্ম সন্ত্রাসী তান্ডব। তারা মানুষদের গোয়ালের গরু রাখেনি, ধানের গোলায় ধান রাখেনি। শুরু করেছিলো লুটপাটের রাজ্য। পরবর্তিতে ক্ষমতায় আসা আওয়ামীলীগ সরকারের কঠোর তৎপড়তায় ও সদ্য প্রয়াত সাংসদ ইসরাফিল আলমের নেতৃত্বে সেই রক্তাক্ত জনপদে ফিরে আসে শান্তির সুবাতাস। বন্ধ হয় জবাই, হানাহানি ও রাহাজানি।

এই দুই উপজেলা নিয়ে গঠিত নওগাঁ-৬ সংসদীয় আসন। প্রায় ১যুগ শাসন করার পর গত ২৭ জুলাই এ আসনের সাংসদ ও রক্তাক্ত জনপদের শান্তির বাহক ইসরাফিল আলম মারা যাওয়ায় আসনটি শুন্য হয়। ইতোমধ্যে এ আসন থেকে আওয়ামীলীগের কয়েকজনের নাম শোনা যাচ্ছে। অপরদিকে বিএনপি কেন্দ্র থেকে সাড়া পাবার অপেক্ষায় রয়েছে। তবে কে পাচ্ছেন নৌকা প্রতিক তা নিয়ে দ্বিদ্ধাদ্বন্দ্বে রয়েছেন মনোনয়ন প্রত্যাশিরা।

জানা গেছে, ১৯৯১ ও ৯৬সালে বিএনপি থেকে মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচনে বিজয়ী হন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সাবেক প্রতিমন্ত্রী আলমগীর কবীর। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন সাবেক সাংসদ মুক্তিযোদ্ধা ওহিদুর রহমান। ২০০১ সালে ইসরাফিল আলমকে পরাজিত করে আলমগীর কবীর বিজয়ী হন। ২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শেষের দিকে আলমগীর কবির এলডিপিতে যোগ দেন। একই বছরে এলডিপি থেকে পদত্যাগ করেন। ২০০৮সালে আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন পেয়ে বিপুল ভোটে বিজয়ী হন ইসরাফিল আলম। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বুলু। এরপর ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় এবং ২০১৮সালের নির্বাচনে সাবেক প্রতিমন্ত্রী আলমগীর কবীরকে পরাজিত করে আবারোও বিজয়ী হন ইসরাফিল আলম। মূলত এ আসনটি চারবার বিএনপির অধীনে থাকলেও ২০০৮ সালের পর থেকে আওয়ামীলীগের দখলে রয়েছে।

প্রয়াত সাংসদ ইসরাফিল আলমের স্ত্রী পারভীন সুলতানা বিউটি বলেন এই আসনে আমি মানুষের কাছে একটি পরিচিত মুখ। সাধারন মানুষের কাছে আমি সাদা-মাটা একজন মহিলা হিসেবেই বেশি পরিচিত। স্বামীর পাশাপাশি আমিও বিভিন্ন সময় এই দুই উপজেলার মানুষদের পাশে দাড়িয়েছি। এলাকার জনগনের চাওয়ার ভিত্তিতে যদি প্রধানমন্ত্রী আমাকে সুযোগ দেন তাহলে আমি ইসরাফিলের রেখে যাওয়া অসমাপ্ত কাজগুলো শেষ করবো ইনশাল্লাহ।

সাবেক সংরক্ষিত আসনের সাংসদ ও জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি শাহীন মনোয়ারা হক বলেন আমি রাণীনগরের মেয়ে। আমি ১৯৯৬সালে সংরক্ষিত আসনে প্রথম এমপি হওয়ার পর থেকে রাণীনগর ও আত্রাইবাসীর জন্য কিছু করার চেষ্টা করেছি। তাই প্রধানমন্ত্রী আমার সবকিছু বিবেচনা করে যদি আমার এলাকার মানুষদের সেবা করার সুযোগ দেন তাহলে আমি নির্বাচনে অংশ্রগ্রহণ করবো।

রাজশাহী মহানগর আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা নওশের আলী বলেন আমি রাণীনগরের সন্তান। কর্ম আর রাজনৈতিক ক্ষেত্রে আমাকে রাজশাহীতে বসবাস করতে হলেও আমার সব কিছুই আমার এলাকার মানুষের জন্য। তাই দল যদি আমাকে মনোয়ন দেয় তাহলে আমি নির্বাচন করবো এবং শতভাগ বিজয়ী হবো বলে আশাবাদি।এছাড়াও নওগাঁ জেলা যুবলীগের সভাপতি খোদাদাদ খাঁন পিটু ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারন সম্পাদক অ্যাডভোকেট ওমর ফারুক সুমনও দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন।

রাণীনগর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক মফিজ উদ্দিন বলেন আনোয়ার হোসেন হেলাল আওয়ামীলীগ থেকে বহিষ্কৃত একজন নেতা। গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনি দলীয় সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোট করে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তাই আসন্ন সংসদীয় উপ-নির্বাচনে আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে হেলালের কোন যোগ্যতা নেই। এছাড়াও আমরা আমাদের পছন্দের ব্যক্তিদের তালিকা কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পাঠাবো। আমি আশাবাদি প্রধানমন্ত্রী এই অঞ্চলের জন্য একজন সৎ,শিক্ষিত ও নির্ভিক মানুষকেই নৌকা প্রতিক দিবেন। প্রধানমন্ত্রী যাকে মনোনয়ন দিবেন আমরা তার হয়েই কাজ করবো।

অপরদিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বুলু বলেন কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুসারে বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে তাহলে আমি আশাবাদি দল আমাকেই মনোনয়ন দিবে এবং মনোনয়ন পেলে আমি শতভাগ বিজয়ী হবো। কারণ আত্রাই ও রাণীনগরবাসীর কাছে আমি অতি পরিচিত একজন বিএনপি কর্মী।

জাতীয়তাবাদি তাঁতি দলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহবায়ক আলহাজ্ব এছাহক আলী বলেন আমি রাণীনগরের সন্তান। শুধু রাজনীতি নয় সব সময়ই আমি ও আমার পরিবার এই অঞ্চলের মানুষদের পাশে ছিলাম এবং আছি। তাই দল যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে তাহলে অবশ্যই আমিই দলীয় মনোনয়ন পাবো এবং আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হলে নির্বাচনে শতভাগ আমিই বিজয়ী হবো।

জেলা বিএনপির আহবায়ক মাষ্টার হাফিজুর রহমান হাফিজ বলেন, কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের জন্য আমরা অপেক্ষা করছি। কেন্দ্র যদি মনে করে উপ-নির্বাচনে অংশ নিতে হবে তাহলে আমরা অংশ নিবো। এরপর প্রার্থী যাচাই-বাছাই করা হবে। আর যদি নির্বাচনে অংশ না নেয়, তাহলে তো প্রার্থী যাচাইয়ের কোন প্রশ্নই আসে না।

রাণীনগর ও আত্রাই উপজেলার সাধারন মানুষদের চাওয়া আওয়ামীলীগসহ যে দলই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক না কেন তারা যেন অবশ্যই এই অবহেলিত অঞ্চলের জন্য একজন সৎ, শিক্ষিত, নির্ভিক ও জনবান্ধব প্রার্থীকে নির্বাচন করেন। কারণ কোন দখলবাজ, চাঁদাবাজ, স্বার্থপর ও জনবিচ্ছিন্ন কোন মানুষকে আগামীতে এমপি হিসেবে দেখতে চায় না এই অঞ্চলের সাধারন মানুষরা। এমনটিই প্রত্যাশা নওগাঁ-৬ আসনের ভোটারদের।

উল্লেখ্য, গত ২৭ জুলাই ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ইসরাফিল আলম। ১৯৬৬ সালে রাণীনগর উপজেলার গোনা ইউনিয়নের ঝিনা গ্রামের মরহুম আজিজার রহমানের পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। সংসদে তিনি শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি ছিলেন। ওই কমিটির পাশাপাশি বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।#



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

নির্বাচন বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৭ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই