বিস্তারিত বিষয়
নওগাঁর তিনটি গ্রামে বাণিজ্যিক ভাবে চাষ হচ্ছে পানপাতার
নওগাঁর তিনটি গ্রামে বাণিজ্যিক ভাবে চাষ হচ্ছে পানপাতার
[ভালুকা ডট কম : ৩০ জুন]
দেশের সৌখিন একটি খাবার পন্য হচ্ছে পানপাতা। এই পান পাতা ও পান খেয়ে মুখ লাল করা নিয়ে রয়েছে অনেক বিখ্যাত গান। অঞ্চল ভেদে রয়েছে এই পানপাতার ভিন্ন স্বাদ। এক সময় দেশ জুড়ে শুধু রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকায় উৎপাদিত পানপাতার কদর ছিলো। বর্তমানে নওগাঁর ৩টি গ্রামে বাণিজ্যিক ভাবে চাষ হচ্ছে পানপাতার।
সদর উপজেলা থেকে ১১কিলোমিটার দূরে কীত্তিপুর ইউনিয়নে অবস্থিত জালম, মাগুড়া এবং জাগেশ্বর গ্রাম। গ্রাম তিনটিতে বসবাস প্রায় আড়াই হাজার মানুষের। গ্রামগুলোতে পৌঁছালে দেখা মিলবে সাড়ি সাড়ি পানের বরজের। তিন গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়ির মানুষ কৃষি জমিতে পানের বরজ গড়ে তুলেছেন। গ্রামগুলো এখন পান পাতার গ্রাম নামে পরিচিতি পেয়েছে।
এলাকার চাষিরা ধানের পাশাপাশি পান পাতার চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। আবহাওয়া এবং চাষ পদ্ধতি অনুকূল, উঁচু, বন্যামুক্ত, বেলে দোআঁশযুক্ত জমি হওয়ায় দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে পান পাতার চাষ। পান চাষের জন্য জমিকে আগাছামুক্ত, সমতল ও উঁচু করে তৈরি করে প্রতি ৬০ সে.মি পর পর ২০ সে.মি চওড়া করে নালা তৈরি করে নিতে হয়। বরোজের বাইরে একটি বড় নিকাশ নালার সাথে ছোট নালাগুলোকে যুক্ত করা হয় ।
স্থানীয় কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, গত প্রায় ১৫বছর থেকে তিনটি গ্রামের প্রায় ৩০০জন কৃষক প্রায় ৭শতাধিক বরজে পান পাতার চাষ করছেন। স্থানীয় পান চাষিরা জানান, পান চাষে ধানের থেকে লাভ বেশি। যার কারনে নিজস্ব জমিতে পানের বরজ তৈরি করে পান চাষ করছেন। সংসারের কাজের পাশা-পাশি পানের বরজ তৈরি করে সারা বছর বরজ থেকে পান পাতা সংগ্রহ করে খুচরা ও পাইকারি দরে বিক্রি করে সংসারে ফিরে এসেছে স্বচ্ছলতা। এই এলকায় মূলত বাংলা, মিঠা, সাচি, কর্পূরী, গ্যাচ, নাতিয়াবাসুত, উজানী, মাঘিসহ কয়েক জাতের পান চাষ করা হচ্ছে।
মাগুড়া গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা অরুপ কুমার মন্ডল ও বিকাশ চন্দ্র মন্ডল জানান, গত তিন চার বছর থেকে অনেকে নতুন করে পান চাষে যুক্ত হয়েছেন। প্রায় তিন শতাধিক পরিবার বর্তমানে পান চাষের সাথে যুক্ত। ধানের চেয়ে বর্তমানে পান চাষ বেশি লাভজনক এছাড়া সারা বছর পান চাষ করা যায়। যার কারনে এই এলাকার অনেক কৃষক এখন পান চাষে ঝুকছেন।
জালম গ্রামের পান চাষী বিধান চন্দ্র বলেন, আমি গত প্রায় ১০বছর যাবৎ পান চাষ করে আসছি। বর্তমানে ৫বিঘা জমিতে পানের চাষ করেছি। পান চাষের জন্য খচর ও লাভের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, এক বিঘা জমিতে প্রায় এক লক্ষ দশ হাজার টাকার মত খরচ হয়। বাঁশ ৩০০ পিচ, যার বাজার মূল্য প্রায় ৪০,০০০ টাকা, সেচ খরচ ২০,০০০ টাকা, ডিএপি সার ৩০ কেজি, মূল্য ৪৮০ টাকা, এমওপি সার ২৫ কেজি, মূল্য ৪০০ টাকা, জিং সার ২ কেজি মূল্য ৩০০ টাকা, বোরন সার ২ কেজি, মূল্য ৩২০ টাকা, ম্যাগনেসিয়াম সালফার ২ কেজি মূল্য ৬০ টাকা, জিপসাম সার ১২ কেজি মূল্য ৩৬০ টাকা, ইউরিয়া সার ১০ কেজি মূল্য ১৬০ টাকা, কীটনাশক এবং ছত্রাকনাশক প্রায় ৩০০০ টাকা এবং পরিচর্যার জন্য শ্রমিক বাবদ প্রায় ৪৫০০০ হাজার টাকা।
তিনি আরো বলেন, একটি পানের বরজ সংস্কার ছাড়া প্রায় ৫-৬ বছর যাবৎ পর্যন্ত অক্ষুন্ন থাকে। এক বিঘা জমির বরজ থেকে প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে দুই বার পান পাতা সংগ্রহ করা যায়। সে হিসেবে প্রতি সপ্তাহে ২ পোয়া (৪ হাজার ৯৬পিচ) পান পাতা উঠানো ক্ষেত থেকে। বর্তমান স্থানীয় বাজার দর অনুযায়ী বড় পান ১ পোয়া ৩ হাজার ৫০০ থেকে ৪ হাজার টাকা, মাঝারি পান ১ পোয়া ১ হাজার ১৫০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৫০০ এবং ছোট পান ৫০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়।
জাগেশ্বর গ্রামের পান চাষী সুনিল চন্দ্র প্রামানিক বলেন, আমি ৭বিঘা জমিতে পানের আবাদ করেছি। এক বিঘার জমির একটি বরজ থেকে মৌসুমে দেড় থেকে দুই লাখ টাকার পান পাতা বিক্রি করা হয়। প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে ক্ষেত থেকে দুই বার পান পাতা সংগ্রহ করা যায়। উৎপাদিত পান পাশ্ববর্তী জয়পুরহাট, দিনাজপুর, রাজশাহী দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করা হয় এবং অনেক পাইকারী ব্যবসায়ীরা এসে নিয়ে যায়। শুধু মাত্র বর্ষা মৌসুমে দলাপচা রোগ দেয় তখন কৃষি অফিসের পরামর্শে অনুযায়ী ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। এছাড়া তেমন কোন গুরুতর রোগবালাই হয়না।
সদর উপজেলা কৃষি অফিসার ড. মো: আনোয়ারুল ইসলাম জানান, জেলায় শুধুমাত্র সদর উপজেলার কীত্তিপুর ইউনিয়নের জালম, মাগুড়া এবং জাগেশ্বর এই তিনটি গ্রামে বাণিজ্যিক ভাবে পানের চাষ হয়ে থাকে। গতবছর ১০হেক্টর জমিতে পান চাষ হয়েছিল। চলতি বছর তা বৃদ্ধি পেয়ে ১৫হেক্টর জমিতে পানের চাষ করা হচ্ছে। সারা বছরই পান পাতা পাওয়া যায়। তেমন কোন গুরুতর রোগ-বালাই নেই, তবে বর্ষা মৌসুমে দলাপচা নামে একটি রোগ দেখা দেয়। কৃষি বিভাগ থেকে পান চাষিদের সব ধরনের পরামর্শ দেয়া হয়।#
সতর্কীকরণ
সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।
কমেন্ট
কৃষি/শিল্প বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
-
সারের পর ডিজেলের দাম বাড়ায় হিমশিমে কৃষক [ প্রকাশকাল : ০৭ আগস্ট ২০২২ ০৫.৩৬ অপরাহ্ন]
-
নওগাঁয় খাল খননে ভাগ্য বদলাবে ১২হাজার চাষীর [ প্রকাশকাল : ০৫ আগস্ট ২০২২ ০৪.২০ অপরাহ্ন]
-
নওগাঁয় দিন দিন জমে উঠেছে আখের বাজার [ প্রকাশকাল : ০১ আগস্ট ২০২২ ০৫.৫০ অপরাহ্ন]
-
রায়গঞ্জে কৃষকদের মাঝে বীজ ও সার বিতরণ [ প্রকাশকাল : ২৬ জুলাই ২০২২ ০৫.৩০ অপরাহ্ন]
-
নান্দাইলে বাজারে আসছে কালো ও সাদা নজরুল [ প্রকাশকাল : ০৬ জুলাই ২০২২ ০৪.০০ অপরাহ্ন]
-
নওগাঁর পদ্মা-সেতুকে কিনতে হলে লাগবে ২৫লাখ [ প্রকাশকাল : ০৬ জুলাই ২০২২ ০৩.৫৫ অপরাহ্ন]
-
নওগাঁয় নায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন আমচাষীরা [ প্রকাশকাল : ১১ জুন ২০২২ ০৪.০০ অপরাহ্ন]
-
তজুমদ্দিনে গরু হৃষ্টপুষ্টকরণ ভিটামিন বিতরণ [ প্রকাশকাল : ০৭ জুন ২০২২ ০৭.০৬ অপরাহ্ন]
-
রায়গঞ্জে পাঁচ হাজার বিঘা জমি জলাদ্ধতার শিকার [ প্রকাশকাল : ০৩ জুন ২০২২ ০৫.৫০ অপরাহ্ন]
-
বাজারে আসা শুরু করলো নওগাঁর আম [ প্রকাশকাল : ২৫ মে ২০২২ ০৩.৩০ অপরাহ্ন]
-
রায়গঞ্জে লাগাতার বৃষ্টিতে কাটা ধান পচে নষ্ট হচ্ছে [ প্রকাশকাল : ১৩ মে ২০২২ ০৭.৩৪ অপরাহ্ন]
-
২৫মে থেকে বাজারে আসছে নওগাঁর আম [ প্রকাশকাল : ১১ মে ২০২২ ০৫.১৩ অপরাহ্ন]
-
রায়গঞ্জে গোখাদ্যের দাম বৃদ্ধিতে বিপাকে খামারিরা [ প্রকাশকাল : ১১ মে ২০২২ ০৫.০০ অপরাহ্ন]
-
নওগাঁয় ধান কাটা-মাড়াইয়ের শ্রমিক-সংকটে কৃষক [ প্রকাশকাল : ০৯ মে ২০২২ ০৭.১৫ অপরাহ্ন]
-
নওগাঁয় ভর্তুকিতে থ্রেসার মেশিন পেলো কৃষকরা [ প্রকাশকাল : ২৮ এপ্রিল ২০২২ ০১.০০ অপরাহ্ন]