বিস্তারিত বিষয়
গাজীপুরে বন্যা করোনার প্রভাবে প্রান্তিক চাষীদের মাথায় হাত
গাজীপুরে বন্যা করোনার প্রভাবে প্রান্তিক চাষীদের মাথায় হাত,ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরী করছে কৃষি বিভাগ
[ভালুকা ডট কম : ১৯ সেপ্টেম্বর]
গাজীপুরে একদিকে করোনার প্রাদুর্ভাব অন্যদিকে বন্যা, এ দুটি বিপদসংকুল পরিবেশ কাটাতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে কৃষকেরা। তারা গত তিন মাসে যেসব ফসল ফলিয়েছেন তাতে লাভের মুখ তো দূরের কথা পুরোটাই ক্ষতি হয়েছে। লাখ লাখ টাকা ব্যায় করা ফসলি জমিতে ফসল নেই শুধু মাচা পড়ে আছে। নতুন করে ফসল ফলানোর চিন্তাও করতে পারছেন না তারা।
কৃষকদের স্বপ্ন ভেঙ্গে দিয়েছে বন্যা ও জলাবদ্ধতা। করোনা ভাইরাসের প্রভাব তো শেষই হচ্ছে না। কিন্ত কৃষকদের এ ক্ষতি কিভাবে কাটিয়ে উঠবেন এবং পরবর্তী ফসল কিভাবে রোপন করবেন তা নিয়ে শংকা থেকেই যাচ্ছে। এদিকে, গত সপ্তাহ দু’য়েক যাবত বন্যার পানি ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে।
গাজীপুরের কালিয়াকৈর, শ্রীপুর ও গাজীপুর সদর উপজেলার মোহনায় ভেড়ামতলী গ্রাম। ওই গ্রামের কৃষক মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, মৌসুমী ফসল ফলিয়ে তিনি করোনা ও বন্যার প্রভাবে ৭০ হাজার টাকা লোকসান গুণেছেন।
অপর চাষী সাদেকুর রহমান জানান, ১ একর ৭০ শতক জমিতে গেল বর্ষা মৌসুম শুরুর আগে চিচিঙ্গা, ধুন্দল, লাউ, পাট শাক ও কলা বাগান করেছিলেন। প্রতি ৩৫ শতক জমি ১০ হাজার টাকায় জোতদারের কাছ থেকে ঋণ নিয়েছেন। ফসল ফলাতে তার খরচ হয়েছে আনুমানিক ৬লাখ টাকা। ওই টাকাও ঋণ করেছেন বিভিন্নজনের কাছ থেকে। কিন্তু এবারের ভারী বর্ষন ও বন্যার পানির কারণে তার সব ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। ঋণ পরিশোধ নিয়ে শংকিত হয়ে পড়েছেন।
৮০ শতক জমিতে ধুন্দল ও চিচিঙ্গা চাষ করেন সাদেরকুর রহমান। শুরুতে ফলন আসতে শুরু করেছিল। কিন্তু যথাযথ মুল্য পাননি করোনা ভাইরাসের কারণে। ভাইরাসটির প্রভাবে নানা প্রতিবন্ধকতায় পাইকাররা এলাকার বাজারে আসতে পারেননি। যারা এসেছেন তারাও পণ্যের যথাযথ দাম দেননি। বাধ্য হয়ে উৎপাদন খরচের চেয়ে অনেক কম মুল্যে কৃষিপণ্য বিক্রি করতে হয়েছে। এক সপ্তাহ বিক্রি করার পরই ভারী বর্ষন, বন্যা ও জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। জমি থেকে ফসল উঠাতে পারেননি। অন্যদিকে কোনো কোনো সময় ফসল উঠালেও সেসব পানির দরে বিক্রি করতে হয়েছে। ফলে খরচ করে জমি থেকে আর ফসল উঠাননি।
এদিকে, লাউ শাক করেছিলেন প্রায় ৪০ শতক জমিতে। তিন ফুট পরিমাণ লাউয়ের ডগা বেড়ে উঠেছিল। কিন্তু বন্যার পানিতে সব ডুবে যাওয়ায় জমিতেই পঁচে গেছে। প্রায় ৭০ শতক জমিতে শবরী ও সাগর কলার জাত রোপণ করেছিলেন। শবরী কলা বাগানের ৪/৫টি গাছে কলার ছরি ঝুলে আছে। সেগুলো অপরিপক্ক অবস্থায় শুকিয়ে যাচ্ছে। কলা বাগানে ৪/৫ ফুট বন্যার পানি আটকে থাকায় গাছগুলো মারা গেছে। জমিতে শুধু লাউয়ের মাচা শোভা পচ্ছে। পানির মধ্যে বেড়ে উঠার সক্ষমতা থাকায় সাগর কলার ৩০/৩৫টি গাছ বেঁচে আছে। এগুলোর মধ্যে ফলনও ভাল হয়েছে। তবে কলা বাগান থেকে তার দেড় লাখ টাকা ক্ষতি হবে বলে জানান কৃষক সাদেকুর রহমান।
অপর কৃষক আজিম উদ্দিন বলেন, ঋণ ও জমি ভাড়া নিয়ে ৩৫ শতক জমিতে শবরী কলার বাগান করেছিলেন। পানিতে সব নষ্ট হয়ে গেছে। এখন প্রায় দুই লাখ টাকার ক্ষতির মুখোমুখি তিনি। কলা চাষই তার সম্বল ছিল, তাই পরবর্তী ফসল ফলানো নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।
পাশর্বর্তী গাজীপুর সদর উপজেলার পিরুজালী গ্রামের ফারুক সরকার জানান, স্থানীয় বিভিন্ন সমিতি থেকে তিন লাখ টাকা ঋণ নিয়ে ২ একর জমিতে ধুন্দল, চিচিঙ্গা ও লাউ শাকের চাষ করেন। জমিগুলো প্রতি ৩৫ শতক চার হাজার টাকা করে ভাড়া নিয়ে মৌসুমী ফসল ফলান। ধুন্দল ও চিচিঙ্গার ফলন ভালো হলেও করোনা ভাইরাসের প্রভাবে পাইকারী বা খুচরা কোনো ধরণের ক্রেতা পাননি বাজারে বা এলাকায়। পরে এলাকার মানুষদের মাঝে ধুন্দল ও চিচিঙ্গা বিনামুল্যে বিলিয়ে দেন। পরপরই এক একর জমিতে লাউ চাষ করার পর বন্যার পানিতে সব তলিয়ে যায়। এখন ঋণ কিভাবে পরিশোধ করবেন বা আবার কিভাবে নতুন করে ফসল ফলাবেন সেই দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন।
তিনি জানান, মাত্র এক লাখ টাকা হলেই তিনি আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন। কিন্তু এ অবস্থায় এলাকায় কেউ তাকে ঋণ দিতে চায় না। সরকারি কোনো সুযোগ থাকলে কেবল সে সুযোগের প্রত্যাশায় এখন দিন পার করছেন। আর কিভাবে বা কোথায় সরকারি ঋণ পাওয়া যাবে তার পরামর্শও কেউ দেয় না।
পাশর্বর্তী কালিয়াকৈর উপজেলার রামচন্দ্রপুর গ্রামের কুজরত উল্লাহর স্ত্রী রাহিমা খাতুন জানান, ৭০ শতক জমিতে পাট শাক, মিষ্টি আলু, লাল শঅক, পালং শাকসহ বিভিণ্ন জাতের ফসল আবাদ করেন। ধীরে ধীরে জমিতে পানি বাড়তে থাকে। আর চোখের সামনেই ফসলগুলো পানিতে তলিয়ে যায়্। পািিন ধীরে ধেির আসছিল আর এবার ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে।
একই গ্রামের জেলোয়ার সিকদারের স্ত্রী আছমা খাতুন জানান, ৮৫ শতক জমিতে পুঁইশাক, ধুন্দল, লাউ শঅক, কুমড়া, কচু রোপন করেছিলেন। বন্যার পানিতে সব তলিয়ে গেছে। লাভে মূলে সব শেষ হয়ে গেছে। আমাদের মতো মৌসুমী ফসলের কৃষক পরিবার সর্বশান্ত হয়ে পড়েছে। গাজীপুরে ১৯৯৮ সনের পর এরকম বন্যা দেখা দেয়নি। কমপক্ষে দেড় লাখ টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে।
চাষী মবিন সিকদার জানান, ৭০ শতক জমিতে লাউ, কুমড়া, বাঙ্গি, ধুন্দল রোপন করেছিলাম। কোনো ফসলই এখন চোখের সামনে নেই। সব পানিতে তলিয়ে গেছে। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব কাটিয়ে উঠতে গিয়ে বন্যার পানির মুখোমুখি হয়ে সব হারিয়েছি।
গাজীপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মাহবুব আলম জানান, গাজীপুর জেলায় মৌসুমী শাক-সব্জী আবাদে জমির পরিমান ৭ হাজার ২’শ ৪২ হেক্টর। এবার বন্যা বা জলাবদ্ধতার কারণে বেশিরভাগ জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা তৈরীর কাজ চলছে। তালিকা তৈরীর পাশাপাশি জেলার ক্ষতিগ্রস্ত ১ হাজার ৪’শ ৮টি কৃষি পরিবারের মধ্যে নতুন করে ফসল ফলাতে বীজ, সার, ঘেরা বেড়া ও সাইনবোর্ড দেয়া হয়েছে। সব্জী প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে ১ হাজার ৫’শ ৫০টি পরিবারে এবং মাসকেলাই দেয়া হচ্ছে ৬’শ পরিবারে। তবে এসব দেয়া হচ্ছে বিভিন্ন প্রদর্শনীর আওতায়।তিনি জানান, কৃষকেরা প্রয়োজনবোধ করলে স্থানীয় ব্যাংকগুলো থেকে সহজ শর্তে কৃষি ঋণ নিতে পারবে। এ ক্ষেত্রে কৃষি বিভাগ কৃষকদেরকে সহায়তা করবে।#
সতর্কীকরণ
সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।
কমেন্ট
কৃষি/শিল্প বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
- রাণীনগরে সরকারের ঘরে ধান দেয়নি কৃষকরা [ প্রকাশকাল : ১৭ মার্চ ২০২৪ ০১.০৮ অপরাহ্ন]
- রাণীনগরে দামী মসলা জিরার বাম্পার ফলন [ প্রকাশকাল : ১৩ মার্চ ২০২৪ ০২.০০ অপরাহ্ন]
- রাণীনগরে চলছে কৃষি জমিতে পুকুর খনন [ প্রকাশকাল : ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ ০৮.০০ অপরাহ্ন]
- তজুমদ্দিনে ধানের চারা রোপন কাজের উদ্বোধন [ প্রকাশকাল : ০৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ ০২.০০ অপরাহ্ন]
- যন্ত্রে ধানগাছ রোপণ করছে রাণীনগরের কৃষক [ প্রকাশকাল : ২৬ জানুয়ারী ২০২৪ ০৪.০০ অপরাহ্ন]
- কালিয়াকৈরে মাছ চাষে ফিশারিজের সফলতা [ প্রকাশকাল : ০৯ জানুয়ারী ২০২৪ ০২.০০ অপরাহ্ন]
- রাণীনগরে ভর্তুকিতে কৃষি যন্ত্রপাতি বিতরণ [ প্রকাশকাল : ০২ জানুয়ারী ২০২৪ ০৩.০০ অপরাহ্ন]
- রাণীনগরে বিনামূল্যে সবজির বীজ বিতরণ [ প্রকাশকাল : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৩ ০১.০০ অপরাহ্ন]
- রাণীনগরে কৃষক মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত [ প্রকাশকাল : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৩ ০১.০০ অপরাহ্ন]
- নওগাঁর মাঠে শোভা পাচ্ছে সরিষার হলুদ ফুল [ প্রকাশকাল : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৭.৩১ অপরাহ্ন]
- রাণীনগরে কৃষক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত [ প্রকাশকাল : ২২ নভেম্বর ২০২৩ ০১.৩০ অপরাহ্ন]
- নান্দাইলে নগদ অর্থ ও উপকরণ বিতরণ [ প্রকাশকাল : ২০ নভেম্বর ২০২৩ ০২.০০ অপরাহ্ন]
- রাণীনগরে জি-৯ কলা চাষে সাড়া ফেলেছে সুফলা [ প্রকাশকাল : ১৯ নভেম্বর ২০২৩ ০৪.০০ অপরাহ্ন]
- রাণীনগরে কৃষি প্রণোদনার বীজ-সার বিতরণ [ প্রকাশকাল : ০৫ নভেম্বর ২০২৩ ০২.০০ অপরাহ্ন]
- কালিয়াকৈরে গার্মেন্টস শ্রমিকদের বিক্ষোভ [ প্রকাশকাল : ২৩ অক্টোবর ২০২৩ ০১.৪৪ অপরাহ্ন]