বিস্তারিত বিষয়
নওগাঁয় বারোমাসি আমের বাগান করে সফল আজিজুল
নওগাঁয় বারোমাসি আমের বাগান করে সফল আজিজুল
[ভালুকা ডট কম : ২২ নভেম্বর]
নওগাঁর মহাদেবপুরে বারোমাসি কার্টিমন আমের বাগান করে সফলতার স্বপ্ন দেখছেন ব্যবসায়ী আলহাজ্ব আজিজুল হক। আর সেই স্বপ্নকে তিনি বাস্তবে রুপান্তর করতেই রাত দিন কাজ করে যাচ্ছেন। গড়ে তুলেছেন মনোমুগ্ধকর একটি আম বাগান। আর গাছে গাছে আমের সমারহ। নতুন জাতের এই আমের ভরে নুইয়ে পড়েছে গাছ। মাত্র ১০মাস বয়েসেই এসেছে ফলন। এরই মাঝে তিনি দুই দফা আম বিক্রি করেছেন।
আজিজুল হক জানান, দীর্ঘদিন থেকে আমের বাগান করার জন্য স্বপ্ন দেখতেন। সেই ভাবনা থেকেই করেন আমের বাগান। বাড়ির পাশে প্রসাদপুর মাঠে আড়াই বিঘা জমিতে ৫১৪টি আমের চারা রোপন করেন। জমি প্রস্তুত করা, চারা লাগানো ও জমির চারপাশে বেড়া দেয়াসহ খরচ হয়েছে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৫০০ টাকা। পরবর্তীতে মানুষ ও গরু-ছাগল থেকে ফসল রক্ষা করতে জিআই তারের বেড়া দেওয়ায় অতিরিক্ত আরো ৫০ হাজার টাকা বেশি গুনতে হয়েছে।
তিনি জানান, পাশের গ্রামের এক নার্সারি মালিক চুয়াডাঙ্গা থেকে মাতৃগাছ নিয়ে আসেন। সেখান থেকে ১১০ টাকা পিচ চারা সংগ্রহ করেন । দশ মাস বয়েসে প্রতিটি গাছে সর্বোচ্চ ৩ থেকে ১০টা পর্যন্ত আম ধরেছে। গত বর্ষা মৌসুমে অতিরিক্ত বৃষ্টির কারনে আমের গুটি একটু কম এসেছে। তবে কৃষি অফিসের পরামর্শে তিনি গাছে ওষুধ স্প্রে করছেন।
তিনি আরও জানান, চলতি বছরের শুরুর দিকে বাগান করে প্রথম বার ১০মাস বয়েছে ৩শ টাকা কেজি দরে কিছু আম বিক্রিয় করেছেন। গত মঙ্গলবার দ্বিতীয় বার ৪০ কেজি আম বিক্রিয় করেন। প্রতি মন আমের মুল্য ১২ হাজার টাকা। ১৫-২০ দিন পরে আরো প্রায় ২০ কেজি আম বিক্রি হবে হলে আশা করছেন। দুই বছরের মধ্য আম বাগানের সম্পূর্ণ খরচ উঠে আসেবে। দুই বছর পরে তেমন কোন খরচ হবে না। একটি আম গাছ ২০ বছর পর্যন্ত ফল দিবে। প্রতিটি গাছেই কম বেশি আম ধরছে। অনেক গাছে নতুন করে মুকুল আসছে। কোন কোন গাছে আবার মুকুল থেকে আমের গুটিও দেখা দিয়েছে। সেই আম আস্তে আস্তে বড় হচ্ছে। এখন আজিজুল হকের চোখে সফলতার রঙিন স্বপ্ন। সাধারনত অষ্ট্রেলিয়া ভারতসহ বেশ কিছু দেশে বারোমাসি আমের চাষ হলেও বাংলাদেশ অনেকটা পিছিয়ে রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আলহাজ্ব আজিজুল হকের বাড়ি নওগাঁ জেলার মহাদেবপুর উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার ইশ^রলক্ষীপুর গ্রামে। গ্রামের পাশের ছোট একটি বাজার যার নাম পাঁঠাকাটা বাজার। সেই বাজারেই গড়ে তুলেছেন তার ব্যবসায়ী প্রতিষ্টান, রড, সিমেন্ট, লোহা ও টিনের দোকান। ব্যবসা ভালই চলতো কিন্তু কোন কিছুতে ব্যবসায় তার মন বসতো না। দোকান ছেলের হাতে দিয়ে অনেক চিন্তা-ভাবনা করে বারোমাসি কার্টিমন আমের বাগান করেন। বাগান করার পর ১০ মাস অক্লান্ত পরিশ্রম করে ফসলতা তার হাতে এসে ধরা দিয়েছে। তিনি এখন একজন সফল বারোমাসি আম চাষি হিসেবে এলাকায় পরিচিত।
লেখাপড়া শেষ করে গতানুগতিক ভাবে ধান চালের ব্যবসা করেছেন বেশ কয়েক বছর ধরে। কিন্তু ধান চালের ব্যবসা থেকে খুব বেশী মুনাফা আসতো না। কয়েক বছরেই বুঝতে পারেন, তিনি দিন বদলের যে স্বপ্ন দেখছেন তা ধান চালের ব্যবসা করে পুরুন হবে না। তবে কৃষি কাজ দিয়েই নিজের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে পারবেন-এমন বিশ্বাস ছিল তার। এক পর্যায়ে ধান চালের ব্যবসা বাদ দিয়ে ফুল ও সবজির চাষ শুরু করেন। ফুল ও সবজি চাষে কাঙ্খিত মুনাফা পেয়েছিলেন। এতে তার মনে আত্মতৃপ্তি আসে না। এরপর রড, সিমেন্ট, লোহা ও টিনের দোকান করেন। তাতে তার মন ভরে না। আজিজুল এরপর শুরু করেন বারোমাসি আম চাষ। এখন তিনি সফল। তার রঙ্গীন স্বপ্ন বাস্তবে এসে ধরা দিয়েছে। এখন তিনি আম বাগান বৃদ্ধির পরিকল্পনা করছেন। আগামিতে ১০ বিঘা জমিতে আম বাগান করার পরিকল্পনা রয়েছে তার। আজিজুলের মতে, ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখা স্বপ্ন নয়, যে স্বপ্ন মানুষকে ঘুমানে দেয় না। সেতাই প্রকৃত স্বপন। সেই স্বপ্নকেই তিনি বাস্তবে রুপ দিয়েছেন।
স্থানীয় কৃষক লুৎফর রহমান বলেন, সারা বছর আম পাওয়া যাবে। আমি কখনো কল্পানা করিনি। আমি আজিজুল হকের বারোমাসি কার্টিমন আম বাগান দেখে খুশি হয়েছি। এখন আমিও মনে মনে ভাবছি বারোমাসি আমের বাগান করবো। নার্সারি মালিকের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তারা আমাকে চারা দিতে চেয়েছেন। আমার মতো এলাকার অনেক কৃষক এই বারোমাসি আমের বাগান করতে আগ্রহ প্রকাশ করছে।
শিক্ষিত যুবক শহীদ বলেন, আজিজুল হকের বারোমাসি কার্টিমন আমের বাগানের মাধ্যমে আমরা ফরমালিনমুক্ত সু-স্বাদু আম খেতে পারছি। আমিও তার দেখে বারোমাসি আমের বাগান করতে চাচ্ছি। তার বারোমাসি আম চাষে আমি উদ্বুদ্ধ হয়েছি। চারা নিয়ে আমিও চাষ শুরু করব ভাবছি। চারার জন্য অর্ডার দিয়েছি।
মহাদেবপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ অরুন চন্দ্র রায় বলেন, বাংলাদেশের মানুষকে কি ভাবে ফল নির্ভর করা যায় সেই পরিকল্পনায় কাজ করে যাচ্ছে কৃষি বিভাগ। বিভিন্ন ভাবে ফলমুল চাষ করে ভাতের ওপর থেকে চাপ কমাতে হবে। আমের ভরা মৌসুমে চাষিরা দাম পান না। কারন এ সময় আম একসাথে বাজারে ওঠে। কৃষি বিভাগ থেকে নতুন জাত বারোমাসি কার্টিমন সম্প্রসারণ করা হচ্ছে।#
সতর্কীকরণ
সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।
কমেন্ট
লাইফস্টাইল বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
-
আমার বাড়ি, আমার খামার প্রকল্পে স্বাবলম্বী হচ্ছে মানুষ [ প্রকাশকাল : ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২১ ০৫:০৫ অপরাহ্ন]
-
শীতের পিঠাই অবিরনের ভাগ্যের চাকা সচল [ প্রকাশকাল : ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২১ ০৮:০৩ অপরাহ্ন]
-
ভালুকায় সাইকেলের চাকায় চলছে হকার আইন উদ্দীনের জীবন [ প্রকাশকাল : ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২১ ০৭:৩০ অপরাহ্ন]
-
শ্রীপুরের সানী, শাকিল ও সাইম যখন জীবনযোদ্ধা [ প্রকাশকাল : ৩০ ডিসেম্বর ২০২০ ০৫:৪৪ অপরাহ্ন]
-
শ্রীপুরে চেয়ারম্যানের বিরোদ্ধে অপপ্রচার [ প্রকাশকাল : ২৪ ডিসেম্বর ২০২০ ০৪:২০ অপরাহ্ন]
-
সরকারি জমিত থাহি, আমার ভাংগা চাল দে-য়া পানি পরে [ প্রকাশকাল : ২৩ ডিসেম্বর ২০২০ ০২:৩০ অপরাহ্ন]
-
শুটকি যায় আমেরিকা-দুবাই তবু পেটে ভাত জোটে না চাতাল-কন্যাদের [ প্রকাশকাল : ০৬ ডিসেম্বর ২০২০ ০৬:০২ অপরাহ্ন]
-
নওগাঁয় বস্তায় আদা চাষ করে সফল মোনায়েম হোসেন [ প্রকাশকাল : ২৯ নভেম্বর ২০২০ ০৮:৩০ অপরাহ্ন]
-
গৌরীপুরে লেপ-তোষক তৈরিতে ব্যস্ত কারিগররা [ প্রকাশকাল : ২৫ নভেম্বর ২০২০ ০৫:০৭ অপরাহ্ন]
-
নওগাঁয় বারোমাসি আমের বাগান করে সফল আজিজুল [ প্রকাশকাল : ২২ নভেম্বর ২০২০ ০৪:০০ অপরাহ্ন]
-
নওগাঁয় করলা চাষে ভাগ্যের বদল হয়েছে কৃষক জলিলের [ প্রকাশকাল : ২৪ অক্টোবর ২০২০ ০৫:১০ অপরাহ্ন]
-
প্রবাসে কর্মরত বাংলাদেশি শ্রমিকরা দেশে ফিরছে কর্মহীন হয়ে [ প্রকাশকাল : ২০ অক্টোবর ২০২০ ০৪:৩৩ অপরাহ্ন]
-
খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে বৃদ্ধ মজিবর ফকিরের [ প্রকাশকাল : ১২ অক্টোবর ২০২০ ০৩:১০ অপরাহ্ন]
-
শ্রীপুরে বাড়িঘর তালাবদ্ধ মা-মেয়ের ঠাঁই এখন গোয়ালঘরে [ প্রকাশকাল : ০৮ অক্টোবর ২০২০ ০৫:০১ অপরাহ্ন]
-
মুক্তিযোদ্ধা স্বামীর কাজের স্বীকৃতি চায় আছিয়া সুলতানা [ প্রকাশকাল : ০২ অক্টোবর ২০২০ ০৬:৩০ অপরাহ্ন]