তারিখ : ২১ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

বাধ্য হয়ে বাক্সের অর্ধেক খুলে কাপড়ের পসরা সাজিয়েছেন

বাধ্য হয়ে বাক্সের অর্ধেক খুলে কাপড়ের পসরা সাজিয়েছেন
[ভালুকা ডট কম : ০৭ জুলাই]
নূরুজ্জামান পেশায় তৈরী পোশাক ব্যসায়ী। স্ত্রী-সন্তান, ভাগিনাসহ পাঁচ সদস্যের সংসার তাঁর। দোকান বা ঘর নেই। টিন দিয়ে বিশেষ উপায়ে তৈরী একটি বাক্সে পোশাক সাজিয়ে রাখেন। ব্যবসা করেন ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের মাওনা চৌরাস্তা উড়াল সেতুর পশ্চিম পাশে ফুটপাতে।

তিনি জানান, ফুটপাতে ব্যবসা করে তার জীবিকা নির্বাহ হয়। চাল কেনা ছাড়া প্রতিদিনের সংসার খরচ এ ব্যবসা থেকেই আসে। গত তিনদিন যাবত লকডাউনের কারণে তার তৈরী পোশাকের বাক্স খোলা হয়নি। সড়কে লোক সমাগম না থাকায় বেচা বিক্রিও হয়নি। ফুটপাতে তাঁর মতো কমপক্ষে দেড় শতাধিক কাপড়ের ব্যবসায়ী রয়েছেন। লকডাউন ঘোষণায় কেউ দোকানের পসরা সাজিয়ে বসেননি। কিন্তু তাঁর বাসায় চাল থাকলেও অন্যান্য বাজার নেই। তাই বাধ্য হয়ে বাক্সটি অর্ধেক অংশ খুলে তৈরী পোশাক বিক্রির জন্য দাঁড়িয়ে রয়েছেন। কিন্তু ক্রেতা নেই। পুলিশ এসে আবার কখন ধাওয়া বা ভ্রাম্যমান আদালত এসে জরিমানা করবে সেই দুশ্চিন্তাও রয়েছে তার। তিনি বলেন, লকডাউন তিনি মানতে বাধ্য। কিন্তু তাঁর আগে তাঁদের মতো নিন্মও নিন্ম মধ্যবিত্ত মানুষদের জন্য সরকারের আর্থিক বা খাদ্য সহায়তা নিশ্চিত করলে তারা জীবকার ব্যাপারে অন্যদের মতো কিছুটা নিশ্চিন্ত থাকতে পারবে।

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ফুটপাতে বিভিন্ন বাস স্টপেজের কাছে সারি সারি বাক্স দেখা যায়। বাক্সগুলো যাতে রোদ বৃষ্টিতে পুড়ে বা ভিজে না যায় সেজন্য প্লাস্টিকের কাগজ দিয়ে মোড়িয়ে রাখা হয়েছে। বাস স্টপেজের গুরুত্ব ও জনসমাগম ভেদে বাক্সের সংখ্যা আনুমাণিক ২০ থেকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে সর্বোচ্চ দুই’শ। খোলা আকাশের নিচে ওইসব বাক্সে কাপড় সংরক্ষণ করে ফুটপাতে ব্যবসা করেন নিন্ম আয়ের মানুষ। কঠোর লকডাউন ঘোষণার পর ওইসব ব্যসায়ীরা কাপড়ের পসরা সাজিয়ে বসেন না।

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলা পরিষদের সামনের ফুটপাতে আনুমানিক ২৫টি মাচাসহ একচালা ছাউনি। এতে ১৮ জন পোশাকের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। বাকিরা মৌসুমী ফল-মূল ও বাদাম বিক্রি করেন। ওই মাচাবিশিষ্ট ১৮টি একচালা এখন পুরোটাই ফাঁকা। লকডাউনের দিন থেকে কেউ আর সেখানে কাপড়ের পসরা সাজিয়ে বসেন না।

ওই ফুটপাতের একটি মাচায় বসে শিশুদের পোশাক বিক্রি করেন ষাটোর্ধ নাজিম উদ্দিন। তিনি বলেন, প্রতিদিন ৫ থেকে ৭’শ টাকা বিক্রি হতো। এখন সব বন্ধ। গত লকডাউনের আগে পাঁচ কেজি আটা কিনেছিলাম। তিনদিনে দুই কেজি শেষ। তিন কেজি আর কতদিন চলবে? ঘরে হাট-বাজার নেই। ছেলে মেয়েরাও পড়াশোনা করে। কাউকে কোনো কাজ করতে দিই না। কাপড় বিক্রি করলে পুলিশ ও প্রশাসনের লোকজন জরিমানা করবে। তাই কয়েকটা মাস্ক নিয়ে বসেছি। যদি কিছু টাকা পাওয়া যায় তাহলে আরেকটা দিন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কিছু খেতে পারব। এরকম লকডাউন দেওয়ার আগে আমাদেরকে সরকারের পক্ষ থেকে কিছু সাহায্য সহযোগিতা করা উচিত।

শ্রীপুর পৌরসভার গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ী এলাকায় মহাসড়কের পাশে ফুটপাতে কাপড় বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন ইব্রাহীম খলিল। তিনি বলেন, বাবা-মা ভাই-বোনসহ সাতজনের সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যাক্তি তিনি। লকডাউনকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, “যতদিন লকডাউন দেওয়া হবে ততদিন অন্ততপক্ষে আমাদের মতো নিন্মবিত্ত দিন এনে দিন খাওয়া মানুষের ঘরে খাবার পৌঁছে দেওয়া উচিত। তা না হলে এভাবে লকডাউন দিলে আমরা না খেয়ে মরব।”

একই মহাসড়কের পাশে ফুটপাতে গেঞ্জি বিক্রি করেন আব্দুল জলিল। তিনি বলেন, লকডাউন যেভাবে হচ্ছে তাতে বেঁচে থাকা কষ্টকর হয়ে উঠেছে। আগে দিনে কমপক্ষে পাঁচ’শ টাকা উপার্জন হতো। এখন তিনদিন যাবত এক টাকাও আসছে না। কয়দিনের জন্য টাকা জমানো থাকে? সরকারের পক্ষ থেকে খাদ্য বা আর্থিক সহায়তা না দিলে লকডাউনে আমাদের খেয়ে না খেয়ে মরতে হবে।

গাজীপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) এস এম তরিকুল ইসলাম বলেন, কিছুদিন আগে পরিবহন শ্রমিকদের খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছিল। গাজীপুরে অনেকে বাইরের জেলা থেকে এসে ব্যবসা বাণিজ্য করছেন। আমরা সকলকেই সাহায্য দেব। আমাদের ভলান্টিয়ারগণ মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে। ইতোমধ্যে কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষকদের আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন শ্রেণী পেশার নিন্ম আয়ের এসব মানুষদের তালিকা একাধিকবার করা হয়েছে। বর্তমানে তাদের কেউ কেউ অন্যত্র চলে গেছেন। সবগুলো বিষয় বিবেচনায় রেখে প্রাপ্য সকলকেই সহায়তা প্রদান করা হবে। তারা বিশেষ করে খাদ্য সহায়তার আওতায় আসবে। জেলা প্রশাসক সহায়তা প্রাপ্যদের চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে গণমাধ্যমকর্মীসহ সকলের সহযোগিতা চেয়েছেন।#



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

লাইফস্টাইল বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৯৩৯১ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই