তারিখ : ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

শ্রীপুরে কৃষি বিভাগের অবহেলায় কৃষকের মাথায় হাত

রোপন প্রক্রিয়া না জানায় ক্ষতির মুখে কৃষক
শ্রীপুরে কৃষি বিভাগের অবহেলায় কৃষকের মাথায় হাত
[ভালুকা ডট কম : ০৭ সেপ্টেম্বর]
গাজীপুরের শ্রীপুরের তেলিহাটি ইউনিয়নের গোদারচালা গ্রামের কৃষক রেজাউল করিমকে আমন মৌসুমে উচ্চ ফলনশীল “বিনা-১৭” ধানের বীজ স্থানীয় কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের সাথে বিনামূল্যে দেয়া হয়েছিল। তিনি দেড় বিঘা জমিতে এজাতের ধান চাষ করেছিলেন। রোপনের ৭দিন পরই দেখেন ধানের শীষ বের হয়ে আসছে । মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ে কৃষক রেজাউলের । পরে বিভিন্ন্ জায়গায় যোগাযোগ করে জানতে পারেন রোপন প্রক্রিয়ায় কারনে তার জমিতে এমন অবস্থা হয়েছে। তার মতে সরকারীভাবে বিনামূল্যে বীজ দিয়েছিল কৃষি অফিস । অথচ চাষ প্রক্রিয়ায় ভিন্নতা থাকার পরও তাকে কোনকিছু অবহিত করা হয়নি। তাই এ ক্ষতির দোষটা তো তার নয়। এর পর স্থানীয় কৃষি অফিসে যোগাযোগ করলে তারা সরি বলে যান। কিন্তু এই ক্ষতিপূরন কে দিবে ?

একই গ্রামের নিজামউদ্দিন ৫০ শতাংশ জমিতে এজাতের ধান চাষ করেছিলেন। তারও একই অবস্থা। ধানের জমি চাষ, রোপন ও সার সহ তার খরচ হয়েছিল প্রায় পনের হাজার টাকা। ধার দেনা করে এ টাকার জোগাড় হলেও ফের তাকে এ ধানের জমি ধ্বংস করে আবারও অন্যান্য জাতের ধান রোপন করতে হয়েছে। তিনি এ বিষয়ে স্থানীয় কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কোন পরামর্শ পাননি। তিনি বলেন, উচ্চফলনশীল জাতের এ ধান অনেক শখ করে চাষ করেছিলেন।  আর এখনতো মাঠেই মারা গেলাম।

স্থানীয় কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, এবার আমন মৌসুমে উপজেলা জুড়ে ১৩৫৩৭ হেক্টর জমিতে ধানের চাষ হয়েছে। চলতি মৌসুমে উচ্চফলনশীল জাতের কথা বিবেচনা করে  ২১জন কৃষকের মধ্যে ৭একর জমি চাষের জন্য সরকারীভাবে বীজ বিতরণ করা হয়। এছাড়াও আরো অর্ধশতাধিক কৃষক তাদের জমিতে বিভিন্ন বীজ ডিলারদের কাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করে বিনা-১৭ জাতের আমন ধানের চাষ করেছেন। তবে বীজ ক্রয়ের সময় কৃষকদের এ বিষয়ে তেমন কোন নির্দেশনা না দেয়ায় এমন সমস্যা তৈরী হয়েছে।

কৃষকদের ভাষ্য মতে, তারা বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরেছেন আমন মৌসুমে উচ্চফলনশীল ধান হচ্ছে বিনা-১৭। ভালো ফলনের আশায় তারা আমন চাষ করলেও তাদের এ জাতের চাষ পদ্ধতিসহ স্থানীয় কৃষি অফিস তাদের কোন কিছু অবহিত করেনি। ফলে অন্যান্য ধানের জাতের মতো তারা বীজতলা তৈরী ও চারা রোপন করেছেন। পরে দেখেন ধানের শীষ বের হয়ে গেছে। অনেকটা ক্ষতি হয়ে গেলেও বাঁচার তাগিদে ফের বাধ্য হয়েই  বিনা-১৭ ধানের জমি ধ্বংস করে অন্যান্য ধানের চারা রোপন করতে হচ্ছে। শুধু রোপন প্রক্রিয়া না জানার কারনেই তাদের এ ক্ষতি। সাথে অভিযোগ রয়েছে মাঠ পর্যায়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের পাশে না পাওয়ার।

আজুগীরচালা গ্রামের শরাফত আলী বলেন, তিনি স্থানীয় এক বীজ ডিলারের কাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করে দুই বিঘা জমি চাষ করেছেন। অপরিপক্ক ধানের শীষ বের হয়ে যাওয়ায় তার সব ধানের জমিই নষ্ট হয়ে গেছে। পরে বিভিন্নভাবে অর্থ সংগ্রহ করে ফের অন্য জাতের ধান রোপন করেছেন। তার দাবী, তিনি এমন অবস্থার সম্মুখীন হলেও স্থানীয় কৃষি বিভাগের পরামর্শ বা তাদের পাশে পাননি।

তেলিহাটি ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা কামরুন্নাহার বলেন, তিনি ভুলে কৃষকদের এ ধানের রোপন প্রক্রিয়া(চারা তৈরী) অবহিত করতে পারেননি। এর জন্য কৃষকদের যে ক্ষতি হয়েছে সেজন্য সবার কাছে তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন।

বাংলাদেশ পরমাণু গবেষণা ইনস্টিটিউট(বিনা)র উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের উর্দ্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শামসুন্নাহার বেগম বলেন, আমন মৌসুমে উচ্চফলনশীল জাতের ধানের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বিনা-১৭। এ জাতের ধানকে সুপার ক্রপ বলা হয়। স্বল্প সময়ে অধিক ফলনে এ ধানের বিকল্প খুব কম। তবে এ জাতের ধান চাষে কিছু প্রক্রিয়া রয়েছে। বীজতলায় চারার বয়স ২০দিনের মধ্যেই তার রোপন করতে হয়। এ ক্ষেত্রে কৃষক হয়তো অন্যান্য ধানের চারার মতো এ জাতটিও রোপন করেছেন তার ফলেই চারা গাছে শীষ বের হয়ে আসছে। এটা কৃষকের অজ্ঞতা ও স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ  বিভাগের অবহেলার ফল।

এ বিজ্ঞানীর পরামর্শ যেসব কৃষকের জমিতে দ্রুত ধানের শীষ বের হয়ে গেছে, তাদের জমি ধ্বংস করতে হবে না। দ্রুত দ্বিগুণ ইউরিয়া প্রয়োগ করলে শীষগুলো নষ্ট হয়ে যাবে। পরে সেখান থেকে নতুন কুঁশি বের হবে তাতে ভালো ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে।

শ্রীপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন কর্মকর্তা এএসএম মুয়ীদ উল হক বলেন, এ জাতের ধান রোপনে অল্প সময়ের চারা রোপন করতে হয়। উচ্চফলনশীল জাতের কথা বিবেচনা করে আমরা কৃষকদের বিনামুল্যের বীজ সরবরাহ করেছি। স্বল্প সময়ে আমাদের বার্তাটি হয়তো কৃষকরা বুৃঝতে পারেননি। তারা অন্যান্য জাতের মতো মনে করে ধানের চারা রোপন করায় এমন পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে। এ ক্ষেত্রে মাঠ পর্যায়ের উপসহাকরী কৃষি কর্মকর্তার অবহেলার বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।#



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

কৃষি/শিল্প বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৭ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই