তারিখ : ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, শনিবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

ভালুকায় কাঠাল যাচ্ছে বিভিন্ন জেলায়

ভালুকায় কাঠালের বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতার ভীড় যাচ্ছে বিভিন্ন জেলায়
[ভালুকা ডট কম : ২৮ মে]
ভালুকা উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজার গুলি মৌসুমের শুরুতেই জমে উঠেছে বাঙ্গালীর প্রিয় খাবার জাতীয় রসালো ফল কাঠাল বেচা কেনায়। অন্যান্য বছরের তুলনায় দামও পাচ্ছেন বেশী। উপজেলার ১১ টি ইউনিয়নের প্রায় সবগুলো গ্রামেই কমবেশী কাঠাল চাষ হয়েছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর বাজারে কাঠালের আমদানী কম বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছে। কৃষকদের সাথে কথা বলে জানাযায় এ বছর মৌসুমের শুরুর দিকে প্রচন্ড খরার কারনে কড়ি অবস্থায় অনেক কাঠাল ঝরে পড়েছে আর অনা বৃষ্টিতে কাঠালের পরিপুর্ণ আকারে  বড় হয়নি। তার পরও কাঠাল উৎপাদন সন্তোষজনক হয়েছে বলে চাষীরা আশাবাদী। বিভিন্ন হাট বাজারে জরো হওয়া কৃষকের কাঠাল বেচা কেনায় শুরু হয়েছে ক্রেতা বিক্রেতাদের আনাগোনা।

কাঠাল উৎপাদনে ভালুকা উপজেলা অনেক আগে থেকেই প্রসিদ্ধ। স্বাদ গুনে কাঠালের বিভিন্ন প্রকারভেধ রয়েছে। লাল কোষ সাদা কোষ নরম মধ্যম ও শক্ত কোষের বিভিন্ন রং ছোট বড় মধ্যম সাইজের কাঠাল রুচি অনুসারে চাহিদার শেষ নেই। এক সময় বর্ষা মৌসুম এলে ভালুকার প্রত্যন্ত এলাকার গ্রাম গুলোতে চালায় চালায় বাউল গান,ঘাটু গানের আসর জমতো। গ্রামের যুবক হতে মধ্য বয়সী লোকেরা বাড়ী বাড়ী ঘুরে কাঠাল সংগ্রহ করে সেই কাঠাল বিক্রির টাকায় এসব গানের আয়োজন করতেন। কাঠাল নিয়ে ঘাটু গানে গাওয়া হতো “ বিয়ান গো লেডা কাডল দুধ দ্যা খাইলাম না, গোয়ালিত গেলাম গাই পানাইবার দুধতো পাইলামনা, ভালুকার লেডা কাডল খাইলে ভুলবাইন না বেয়াইন গো লেডা কাডল দুধ দ্যা খাইলাম না”।

জৈষ্ঠ আষাঢ় মাস এলে মধু মাসের রসাল মিষ্টি ফল কাঠাল ও গোয়ালের গাভীর দুধ নিয়ে কুটুমবাড়ী যাওয়া এ অঞ্চলের মানুষের একটি চিরায়ত ঐতিয্যগত প্রথা রয়েছে বহু আগে থেকেই। গ্রামের দুষ্ট ছেলেরা গাছের ডালে বসেই পাঁকা কাঠাল খাওয়ার প্রতিযোগিতায় মেতে উঠে। গাছে গাছে কাঠ বিড়ালী পাঁকা কাঠালে মুখ দিয়ে কোষ ছাড়িয়ে খাওয়া শুর করলেই সকলের নজরে আসে। এ সময় গাছে গাছে এক ধরনের ঝিঁ ঝিঁ পোকার সারাদিন ব্যাপী অনবরত শব্দ সারাক্ষন গ্রামের মানুষের কানে বাজে। প্রবাদ রয়েছে এসব পোকার অনবরত ঝনঝনি শব্দে নাকি গাছের কাঠাল পেঁকে যায়।

কাঠালের কোন কিছুই ফেলনা নয়। রসালো কোষ খাওয়ার পর বিচি রেখে দেওয়া হয় আর খোসা গরুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। বিচি কাঁচা অবস্থায় ছোট মাছ দিয়ে ডাটা-কাঠাল বিচির তরকারী আর ঘরে রেখে শুকিয়ে ভেজে খেতে দারুন সুস্বাধু। ভালুকার আঞ্চলিক ভাষায় লেডা কাঠাল অর্থাৎ নরম কোষের রস ছাড়িয়ে তা জ¦াল করে জ্যালির মত তৈরী করে ক্ষেতে খুবই মুখ রোচক হয়। পান্তাভাতে কাঠাল,খৈ-মুড়িতে কাঠাল , চিতই পিঠায় কাঠাল শুধুই খালি কাঠাল খাওয়াতে সবার কাছে ভাল লাগে।

গ্রামের সব বাড়ীতেই কম বেশী ৮/১০ টি কাঠাল গাছ রয়েছে। কাঠাল আবাদ লাভ জনক হওয়ায় অনেকে বড় বড় বাগান করে বছরে লাখ লাখ টাকার কাঠাল বিক্রি করে সংসারে স্বাচ্ছন্দ এনেছেন। আর এসব কাঠাল ভ্যান গাড়ী করে ভালুকা বাসষ্ট্যান্ড, সীডষ্টোর বাসষ্ট্যান্ড, ভরাডোবা বাসষ্ট্যান্ড, উথুরা বাজার, মল্লিকবাড়ী বাজার, বিরুনিয়া বাজার , কাচিনা বাজার, আঙ্গারগাড়া বাজার ও মাষ্টারবাড়ী বাসষ্ট্যান্ড এলাকায় নিয়ে চাষীরা বিক্রি করেন। রাজধানী ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন জেলা হতে পাইকার এসে স্থানীয় ফরিয়াদের সহায়তায় কাঠাল কিনে ট্রাক বোঝাই করে নিয়ে যায়। ভালুকার কাঠাল বিভিন্ন এলাকার মানুষের কাছে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ঢাকা ময়মনসিংহ মহা সড়ক হওয়ার পূর্বে খীরু নদীর বুক চিরে প্রতিদিন শত শত নৌকায় কাঠাল ভরে ভাটি এলাকার বিভিন্ন হাট বাজার গুলিতে নেয়া হতো বিক্রির জন্য যা পাইকাররা কিনে নৌপথে বিভিন্ন জেলায় নিয়ে যেতেন।

২৮ মে মঙ্গলবার সরজমিন সীডস্টোর বাজারে গিয়ে দেখা যায় ভ্যান গাড়ী করে কাঠাল এনে বিভিন্ন আরতে কাঠাল বেচা কেনা করছেন এলাকার চাষীরা। এ বিভিন্ন আরত থেকে ট্রাকে কাঠাল উঠাচ্ছিলেন কয়েকজন শ্রমিক। সীলেট জেলার গোবিন্দ গঞ্জের একজন বেপারি জানান ১ লাখ ৩০ হাজার টাকায় এক ট্রাক কাঠাল কিনে নিয়ে যাচ্ছেন নিজ জেলায়। তিনি জানান তার এলাকায় ক্রয়কৃত এক ট্রাক কাঠাল প্রায় ২ লাখ টাকা বিক্রি হবে। এক ট্রাক কাঠাল হতে সব খরচ বাদ দিয়ে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা তিনি মুনাফা পাবেন বলে আশা করছেন। দীর্ঘদিন যাবৎ তিনি ময়মনসিংহের ভালুকা হতে কাঠাল নিয়ে সীলেট জেলায় বিক্রি করছেন। ভালুকার কাঠাল তাদের এলাকায় অনেক চাহিদা। রিক্সাভ্যানে কাঠাল নিয়ে দাড়িয়ে থাকা স্থানীয় বেপারী আজমত আলী জানান তিনি হবিরবাড়ী ইউনিয়নের পাড়াগাঁও বড়চালায় কয়েকজন কৃষকের কাঠাল বাগান মৌসুমের শুরুতেই কিনে রেখেছেন। তিনি জানান এ বছর কাঠালে কোন রোগ বালাই বা পোকার আক্রমন না থাকলেও খরার কারনে কাঠাল সাইজে বড় হয় নাই। ভালুকার কাঠাল সুস্বাদু হওয়ায় ঢাকা, কুমিল্লা, সীলেট,নোয়াখালি,বরিশাল সহ দেশের বিভিন্ন জেলায় রপ্তানী হয়ে থাকে। তবে আগের চেয়ে কাঠালের আমদানি অনেক কমে গেছে। কারন হিসেবে তিনি জানান এ অঞ্চলে অপরিকল্পিত ভাবে শিল্প কারখানা গড়ে উঠায়  পরিবেশ দূষন হচ্ছে প্রতি নিয়ত। অপর দিকে ফালগুন চৈত্র মাসে যখন কাঠাল গাছে রেনু আসতে শুরু করে তখন লোকালয়ে স্থাপিত অবৈধ ইটভাটার কালো ধোঁয়া এলাকায় ছড়িয়ে পরলে কাঠালের রেনু মরে উৎপাদন কমে যায়। কৃষকরা জানান শুধু কাঠালই নয় বিভিন্ন এলাকার আকাশমণি গাছের বিস্তার বাড়ানোয় ফলজ বৃক্ষগুলি ক্রমশ মরে যাচ্ছে এর প্রভাব কাঠাল গাছেও ব্যাপক আকারে পরেছে। বনজ বৃক্ষ আকাশমণির বিষাক্ত প্রভাবে অন্যান্য দেশীয় গাছে পচনধরে আস্তে আস্তে গাছ মরে যায়। এ ব্যাপারে তিনি সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের দৃষ্টি কামনা করেছেন অন্যথায় জাতীয় ফল কাঠাল এক সময় হারিয়ে যাবে কালের গর্বে।

এ বছর প্রতিটি কাঠাল ওজন ও আকৃতি অনুসারে স্থানীয় বাজারে ৫০ টাকা হতে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।  উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নুসরাত জামান জানান ভালুকা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ৩৮০ হেক্টর জমিতে কাঠাল আবাদ হয়েছে। কাঠালের উৎপাদন লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে ৪৩ হাজার ৩২০ মেট্রিক টন। সর্বপরি খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের ধারনা ভালুকায় কম খরচে উৎপাদিত কৃষকের অর্থকরী ফসলের মাঝে কাঠাল অন্যতম। নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে কাঠাল বিক্রির টাকায় অনেকের সংসারে সচ্ছলতা ফিরেছে। অপরদিকে কাঠাল বেচা কেনার সাথে ব্যবসায়ী,শ্রমিক,ভ্যান চালক, ট্রাক চালক,যানবাহন মালি দের রুটিরুজির সম্পর্ক জড়িত।

চালা পতিত জমি, বাড়ীর আঙ্গিনা, ক্ষেতের আল, পুকুর পাড়, রাস্তার কিনারে কাঠাল গাছ ভাল হয়। গাছের পরিচর্যা, সার প্রয়োগ ও রোগ নির্মুলে বিভিন্ন কীটনাশক দিলে পোকার আক্রমন থেকে রক্ষা ও আকারে কাঠাল বড় হওয়ায় মূল্য বেশী পাওয়া যায়।#




সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

ভালুকা বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৯৩৯১ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই