বিস্তারিত বিষয়
দুসরা 'ঈদ' আত্মত্যাগের বিনিময়েই হয় কোরবানি
দুসরা 'ঈদ' আত্মত্যাগের বিনিময়েই হয় কোরবানি
[ভালুকা ডট কম : ০৩ আগস্ট]
'ঈদ' আরবি শব্দ। আসলে এর অর্থটাই হচ্ছে ফিরে আসা। এই ফিরে আসা'কে ঈদ বলা হয় এ কারণে যে, মানুষ বারংবার একত্রিত হয়ে সাধ্য মতো যার যা- উপার্জন তা অনেক খুশিতে আল্লাহ্ পাকের দরবরে সোয়াব এর আশায় আনন্দ উৎসব করে। বলা যায়, সোয়াবের পাশা পাশি একে অপরের প্রতি হিংসা বিদ্বেষ দূর হয়। সুতরাং ঈদকে দ্বারাই মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাকে নিয়ামাত কিংবা অনুগ্রহে ধন্য করে থাকে। বারংবারই তাঁর ইহসানের নৈতিক শিক্ষা প্রদান করে।
আল্লাহ্ তায়ালার প্রতিই ভালোবাসা লাভের উদ্দেশ্যে কিছু বিসর্জন দেয়াকে কোরবানী বলা যেতে পাবে। সুতরাং আর্থিক ভাবেই সামর্থ্যবান ব্যক্তির উপরেই কোরবানির হুকুম পালন ওয়াজিব হয়েছে। তাই সামর্থ্য থাকা সত্তে কেউ যদি কোরবানির মতো ইবাদত থেকে বিরত থাকে কিংবা কোরবানি না দেয়। তাহলে সেই ব্যক্তি অবশ্যই যেন গুনাহগার হবে। আল্লাহর হুকুমের আনুগত্যের মধ্যে কোরবানি একটি বিশেষ আমল। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে মহান আল্লাহ পাক মুসলিম উম্মাদের জন্য যেন 'নিয়ামাত' হিসেবেই ঈদ দান করেছে। হাদিসে বর্ণিত রয়েছে যে ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় যখন আগমন করে ছিল তখন মদিনা বাসীদের ২টি দিবস ছিল, সে দিবসে তারা শুধুই খেলাধুলা করত।
আনাস রাদি আল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গুরুত্বের সঙ্গে প্রশ্ন করে ছিল এমন দুই দিনের তাৎপর্যটা কী? মদিনা বাসীগণ উত্তর দিলেন : আমরা জাহেলী যুগে এই দুই দিনে খেলা ধুলা করে কাটাতাম। তখন তিনি বলেছিলেন, আল্লাহ রাববুল আলামিন এই দু'দিনের পরিবর্তেই তোমাদেরকে এর চেয়েও শ্রেষ্ঠ দু’টো দিন দিয়েছেন। তাহচ্ছে মুসলিম উম্মার 'ঈদুল আজহা ও ঈদুল ফিতর।
সুতরাং শুধু খেলা-ধুলা বা আমোদ-ফুর্তির জন্যই যে দু'দিন ছিল তাকে পরিবর্তন করেই সৃষ্টিকর্তা এইদুটি ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতরের ঈদের দিনকেই দান করে ছিল। সমগ্র উম্মতগণ যেন ঈদের দিনেই মহান আল্লাহর শুকরিয়া, জিকির এবং তাঁর নিকটে ক্ষমা প্রার্থনার সহিত শালীনতায় আমোদ-ফুর্তি ও নিজস্ব সাজ-সজ্জা কিংবা খাওয়া-দাওয়ার ব্যপারেও সবাই সংযম হতে পারে। এমন কথা গুলো বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ পুস্তকে ইবনে জারীর রাদি আল্লাহু আনহুর অনেক বর্ণনায় উঠে এসেছে। জানা দরকার, দ্বিতীয় হিজরিতে প্রথম ঈদ করে ছিল 'রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।' তাই ইসলাম ধর্মে 'বড় দুইটি' ধর্মীয় উৎসবের দিনের মধ্যে একটি ঈদ হচ্ছে- ঈদুল আযহা। এইদেশে এমন উৎসবটিকে আবার অনেক মানুষরা কুরবানির ঈদ বলেও সম্বোধন করে। 'ঈদুল আযহা' মূলত 'আরবী বাক্যাংশ'। এর অর্থটা দাঁঁড়ায় 'ত্যাগের উৎসব।' এরই মূল প্রতিপাদ্য বিষয়টা হচ্ছে 'ত্যাগ করা'। এ দিনটিতে মুসলমান তাদের সাধ্যমত ধর্মীয় নিয়মানুযায়ী উট, গরু, দুম্বা, ছাগল কোরবানি কিংবা জবাই দিয়ে থাকে। ঈদুল আজহার দিন যেন ঈদের সালাতের পূর্বে কিছু না খেয়ে সালাত আদায় করে। তার পরে কুরবানি দিয়েই গোশত খায়। এটাই সুন্নাত এবং বিশ্ব নবী তাই করে ছিল। "বুরাইদা রাদি আল্লাহু আনহু" হেকে বর্ণিত রয়েছে যে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতরের দিন না খেয়ে ঈদগাহে যেতো না। আবার ঈদুল আযহা'র দিন তিনি ঈদের সালাতের পূর্বেও খেতেন না। এমন "তাকওয়ার সহিত 'কোরবানি' আদায় করা দরকার। আবার এও জানা যায় যে, 'কোরবানী দেওয়া পশুর রক্ত জমিনে পড়ার পূর্বেই আল্লাহ তায়ালা যেন সেই কোরবানি কবুল করে নেওয়ার ঘোষণাও দিয়েছে।
এখন এ ঈদ আনন্দের বাস্তবতার দিকে আসা যাক। 'ঈদ' শব্দটিকে যখন মানুষ প্রথম বুঝতে শিখে তখন তাঁদের শিশু কাল থাকে এবং সেসময় তারা বড়দের উৎসাহে ১ম ঈদের আনন্দকে উপভোগ করে। তারা সারা রাত না ঘুমিয়ে খুব ভোরে নতুন সুগন্ধি সাবান দিয়ে গোসল করে। তারপর ঈদের নামাজের জন্যই আতোর, সুরমা এবং নতুন নতুন জামা কাপড় পরে বাবা ভাইদের নিয়ে পাড়া- প্রতিবেশীদের সঙ্গেই যেন তারা প্রিয় ঈদগাহে যেত। তবে ঈদগাহে যে পরিবেশ হয়ে উঠে সেটিই মুলত ঈদের খুশি। ঈদগাহের মাঠে পায়ে হেঁটে যাওয়া বা আসার মজাই আলাদা। জানা যায়, 'আলী রাদি আল্লাহু আনহুর' বর্ণনা মতে সুন্নাত হলো ঈদগাহে- পায়ে হেঁটেই যাতাযাত করা। সুতরাং, উভয় পথের লোকদেরকে সালাম দেয়া এবং ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করাও ভালো হয়। উদাহরণ স্বরূপ নবীকারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদগাহে এক পথে গিয়ে আবার অন্য পথেই ফিরেছে।
"ঈদুল আযহার" তাৎপর্য হলো ইসলাম ধর্মের নানা বর্ননায় যা পাওয়া যায় তা হলো এই, মহান 'আল্লাহ তায়ালা' ইসলাম ধর্মেরই এক নবী 'হযরত ইব্রাহীম (আঃ)'কে স্বপ্নে তাঁর সবচেয়ে প্রিয় বস্তুকেই আল্লাহ তায়ালাকে খুশির উদ্দেশ্যেই কুরবানির নির্দেশ দিয়ে ছিল। সেই আদেশেই 'হযরত ইব্রাহিম(আঃ)' তাঁর সবচেয়ে প্রিয় পুত্র ইসমাইলকে কুরবানি করার জন্যেই যেন প্রস্তুত হয়েছিল। কিন্তু তাঁর সৃষ্টিকর্তা তাঁকে তা করতে বাধা দিয়ে ছিল। সেখানেই নিজ পুত্রের পরিবর্তেই একটি পশু কুরবানি হয়েছিল এবং তা হয়েছিল সৃষ্টিকর্তার নির্দেশেই। এ ঘটনাকে স্মরণ করেই বিশ্বের মুসলিম ধর্মাবলম্বীরা মহান আল্লাহ্ তায়ালার সন্তুষ্ঠি অর্জনে প্রতি বছর ঈদুল আযহা দিবসটি পালন হয়ে আসে। হিজরির বর্ষ পঞ্জির হিসাবেই জিলহজ্জ্ব মাসের দশ তারিখ থেকেই শুরু করে বারো তারিখ পর্যন্ত ৩ দিন ধরেই যেন ঈদুল আযহা চলে। হিজরি চান্দ্র বছরের গণনা অণুযায়ী “ঈদুল ফিতর” এবং ঈদুল আযহার মাঝে দু'মাস ১০ দিনের ব্যবধানেই হয়ে থাকে। আর দিন হিসেবেই তা সবোর্চ্চ ৭০ দিনও হতে পারে।
জানা দরকার ঈদুল আযহার দিন থেকেই শুরু করে যেন পরবর্তী দু'দিন পশু কুরবানির জন্যেই নির্ধারিত থাকে। বাংলাদেশের মুসলমানেরা সাধারণত গরু বা খাসী "কুরবানি" দিয়ে থাকে। এক ব্যক্তি একটি মাত্র গরু, মহিষ কিংবা খাসি কুরবানি করতে পারে। তবে গরু এবং মহিষের ক্ষেত্রেই সর্বোচ্য ৭ ভাগে কুরবানি করা যায় অর্থাৎ দুই, তিন, পাঁচ বা সাত ব্যক্তি একটি গরু, মহিষ কুরবানিতে শরিক হলে ক্ষতি নেই। তাই এ দেশে সাধারণত কুরবানির মাংস তিন ভাগে ভাগ করেই- ১ ভাগ গরিব-দুঃস্থদের মধ্যে ১ ভাগ আত্মীয় -স্বজনদের মধ্যে এবং এক ভাগ নিজেদের খাওয়ার জন্য রাখা উচিত, তবে ইসলামের আলোকেই জানা যায়, এই ঈদের মাংশ বিতরনের জন্য কোন প্রকার সুস্পষ্ট হুকুম নির্ধারিত নেই। এমন কুরবানির পশুর চামড়া বিক্রির অর্থগুলো দান করে দেওয়ার নির্দেশ রয়েছে। কোনো মুসাফির অথবা ভ্রমণকারির ওপর কুরবানি করা ওয়াজিব নয়। আবার ঈদুল আযহার ঈদের নামাজের আগেই ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের পশু কুরবানি সঠিক হয় না। জানা যায়, এমন কুরবানির প্রাণী খাসী বা ছাগলের বয়স কমপক্ষে ১ বছর ও ২ বছর বয়স হতে হয় গরু কিংবা মহিষের বয়স। নিজ হাতে কুরবানি করাটাই উত্তম। এই কুরবানি প্রাণীটি দক্ষিণ দিকে রেখে কিবলা মুখী করে খুবই ধারালো অস্ত্র দ্বারা অনেক স্বযত্নে মুখে উচ্চারিত ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলে জবাই করাটা ইসলাম ধর্মের বিধান।
সুতরাং এই 'ঈদ' আনন্দে ভরে উঠুক প্রতিটি প্রাণ। সবাই সবার প্রতি 'ভালোবাসা ও আনন্দ' নিয়ে একসঙ্গেই কাজী নজরুল ইসলামের ঈদুল আযহার গান অন্তরে ধ্বনিত করি:- "ঈদুল আযহার চাঁদ হাসে ঐ, এলো আবার দুসরা ঈদ, কোরবানি দে কোরবানি দে, শোন খোদার ফরমান তাকিদ। এমনি দিনে কোরবানি দেন, পুত্রে হযরত ইব্রাহিম। তেমনি তোরা খোদার রাহে, আয়রে হবি কে শহীদ।।
লেখক,বার্তা প্রেরক
নজরুল ইসলাম তোফা
টিভি ও মঞ্চ অভিনেতা, চিত্রশিল্পী, সাংবাদিক, কলামিষ্ট এবং প্রভাষক।
সতর্কীকরণ
সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।
কমেন্ট
ইসলামীক বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
- কালিয়াকৈরে ঈদে মিলাদুন্নবী (সাঃ) উদযাপন [ প্রকাশকাল : ০৯ অক্টোবর ২০২২ ০৩.৩০ অপরাহ্ন]
- এ বছর হজ করতে পারবেন ১০ লাখ মানুষ [ প্রকাশকাল : ২৩ এপ্রিল ২০২২ ০৬.১৯ অপরাহ্ন]
- ৬০ বছর বিনা বেতনে মসজিদের ইমামতি [ প্রকাশকাল : ৩১ জুলাই ২০২১ ০৪.০৮ অপরাহ্ন]
- ৪০ দিন জামাতে নামাজ পড়ে সাইকেল পেল ১২ কিশোর [ প্রকাশকাল : ১১ মে ২০২১ ০৪.০৭ অপরাহ্ন]
- নান্দাইলে কুরআন শিক্ষা সমাপনী ও কোরআন শরীফ বিতরণ [ প্রকাশকাল : ০৮ ফেব্রুয়ারী ২০২১ ০৫.২৩ অপরাহ্ন]
- কালিয়াকৈরে যথাযথ মর্যাদায় পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপন [ প্রকাশকাল : ৩০ অক্টোবর ২০২০ ০৫.১৩ অপরাহ্ন]
- পশ্চিম গগনে বাঁকা চাঁদ দেখলেই পবিত্র ঈদুল ফিতরের ঈদ [ প্রকাশকাল : ২৩ মে ২০২০ ০৫.৩০ অপরাহ্ন]
- কোরআনের আলো প্রতিযোগিতায় সেরা-১০ বেনাপোলের হাফেজ [ প্রকাশকাল : ২০ মে ২০২০ ০৭.০০ অপরাহ্ন]
- ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নতুন নির্দেশনা [ প্রকাশকাল : ৩০ মার্চ ২০২০ ০৪.৫০ অপরাহ্ন]
- শেষ হলো বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব [ প্রকাশকাল : ১৯ জানুয়ারী ২০২০ ০৬.০০ অপরাহ্ন]
- বিশ্ব ইজতেমা সম্মেলনের প্রথম পর্ব শুরু শুক্রবার [ প্রকাশকাল : ০৯ জানুয়ারী ২০২০ ০৫.০০ অপরাহ্ন]
- ত্রিশালে ৩দিন ব্যাপী জোড় ইজতেমা [ প্রকাশকাল : ০২ জানুয়ারী ২০২০ ০৫.০০ অপরাহ্ন]
- ২৫শে নভেম্বর নান্দাইলে ইসলামী সম্মেলন [ প্রকাশকাল : ২৩ নভেম্বর ২০১৯ ১২.১১ অপরাহ্ন]
- কালিয়াকৈরে ঈদে মিলাদুন্নবী পালিত [ প্রকাশকাল : ১০ নভেম্বর ২০১৯ ০৬.০৫ অপরাহ্ন]
- দুসরা 'ঈদ' আত্মত্যাগের বিনিময়েই হয় কোরবানি [ প্রকাশকাল : ০৩ আগস্ট ২০১৯ ০৫.১০ অপরাহ্ন]