তারিখ : ২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

আতঙ্কে হাওর অঞ্চলের কৃষকরা

আতঙ্কে হাওর অঞ্চলের কৃষকরা
[ভালুকা ডট কম : ০৭ এপ্রিল]
গত এক সপ্তাহ ধরে উজান থেকে নেমে আসা ঢল ও প্রবল বৃষ্টির কারণে বাংলাদেশের হাওর অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। ভারতের চেরাপুঞ্জি থেকে বৃষ্টির পানি সুনামগঞ্জের যাদুকাটা ও সুরমা নদী দিয়ে ঢল আকারে নেমে আসছে হাওরে।পানির চাপে বাঁধ ভেঙে তলিয়ে যাচ্ছে এ অঞ্চলের প্রধান ফসল ধান। এ অবস্থায় আতঙ্কে রাত পার করছেন এসব অঞ্চলের কৃষক। পানি বাড়লে ক্ষেতের ধান আর তুলতে পারবেন না বলে তাদের আশঙ্কা।

গত এক সপ্তাহে মেঘালয় থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের নদ-নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়ে জেলার সবক'টি হাওরে ফসল ঝুঁকিতে পড়েছে। গত শনিবার তাহিরপুর উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওরের একটি বাঁধ ভেঙে প্রথমে ফসল তলিয়ে যায়। এরপর জেলার শাল্লা উপজেলায় তিনটি, সদর উপজেলায় একটি, ধর্মপাশা উপজেলায় একটি হাওরে ফসলহানি ঘটেছে।

অপরদিকে, নেত্রকোনায় খালিয়াজুরীর ধনু নদীর পানি হঠাৎ করেই আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। এরই মধ্যে খালিয়াজুরী উপজেলায় কয়েকটি হাওরের নিচু জমির প্রায় ৫০০ একর পরিমাণ বোরো ফসল ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে। স্থানীয়রা বলছেন, ঢলের পানি এভাবে বাড়তে থাকলে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে এ উপজেলার ২১ হাজার হেক্টর জমির ফসলই তলিয়ে যাবে।

এ বছর নেত্রকোনার হাওরবেষ্টিত উপজেলা মদনমোহনগঞ্জ ও খালিয়াজুরীতে ৪৪ হাজার হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ হয়েছে। এ ফসলের ওপর নির্ভরশীল হাওরাঞ্চলের কয়েক লাখ মানুষ। ধানে এখন কেবল শীষ এসেছে। কাটার উপযোগী হতে সময় লাগবে আরো অন্তত ১৫-২০ দিন। বছরের এ সময়ের একমাত্র ফসলের ওপর নির্ভরশীল মদনমোহনগঞ্জ-খালিয়াজুরী হাওরাঞ্চলে আগাম বন্যার আশঙ্কায় তাই দিশেহারা কৃষকরা।

খালিয়াজুরী উপজেলা কৃষি বিভাগ বলছে, ১ এপ্রিল থেকে পানি বেড়ে যাওয়ায় এরই মধ্যে ক্ষতি হয়েছে ১১৩ হেক্টর জমির ফসল।কেবল নেত্রকোনায়ই নয়, টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জে নদ-নদীর পানিও বাড়ছে। পানি উপচে একের পর এক ফসলরক্ষা বাঁধ ভেঙে নিমিষে তলিয়ে যাচ্ছে সোনালি ফসল। এরই মধ্যে জেলা সদর, তাহিরপুর, শাল্লাসহ সবক’টি উপজেলার ৩০৫ হেক্টর জমির বোরো ফসল ডুবে গেছে। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছেন হাজারো কৃষক।

সুনামগঞ্জ  জেলা সদরের ছোট কালনার হাওর, ধর্মপাশা উপজেলার চন্দ্র সোনার তাল হাওর, ছাতক উপজেলার গুয়া পাকুয়া, শাল্লার কালার বন হাওর, কৈয়ার বন, পুটিয়ার হাওরে বাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করছে। তলিয়ে গেছে বহু জমির কাঁচা ধান।সুনামগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এবার জেলায় ২ লাখ ২২ হাজার ৮০৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৩ লাখ ৫০ হাজার ২২০ মেট্রিক টন। ইতোমধ্যে  আকস্মিক পাহাড়ি ঢলে তাহিরপুর, শাল্লা, সদর, ছাতকসহ জেলায় মোট ৩০৫ হেক্টর বোরো জমি তলিয়ে গেছে।

হাওরের ফসল রক্ষায় বাঁধের  ফাটল সারাতে জেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড, উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, জনপ্রতিনিধিসহ হাওর অঞ্চলের শত শত কৃষক স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে দিন-রাত কাজ করছেন। হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম ও গাফিলতির অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় লোকজন।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শামছুদ্দোহা বলেন, এটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ নয়। স্থানীয়রা ফসল রক্ষায় বাঁধটি দিয়েছেন। নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় বাঁধ ভেঙে গেছে। এটি সংস্কারের সুযোগ নেই।

এদিকে, সুনামগঞ্জের হাওরে ফসলহানি ও বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম-দুর্নীতি খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি করার ঘোষণা দিয়েছেন সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. জাহাঙ্গীর হোসেন। জেলা প্রশাশক পদাধিকার বলে হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণসংক্রান্ত জেলা কমিটির সভাপতি। গতকাল (মঙ্গলবার) রাতে জেলার ধর্মপাশা উপজেলার চন্দ্র সোনার থাল হাওরে ভেঙে যাওয়া বাঁধ পরিদর্শনকালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

এদিক, তাহিরপুরে হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত যাদুকাটা, পাটলাই, বৌলাইসহ সব নদীতে মালবাহী নৌকা চলাচলে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন উপজেলা প্রশাসন। এছাড়া বড়ছড়া, ছাড়াগাঁও, বাগলী শুল্ক স্টেশন এবং ফাজিলপুর (যাদুকাটা ১ ও ২ বালুমহাল) থেকে মালবাহী নৌযান যেন ছেড়ে না যায় সেজন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জের হাওরে একসময় ঠিকাদারদের মাধ্যমে বাঁধ নির্মাণের কাজ হতো। ২০১৭ সালে বানের জলে ব্যাপক ফসলহানির পর বাঁধ নির্মাণে নতুন নীতিমালা তৈরী করা হয়। এতে ঠিকাদারি ব্যবস্থা পরিবর্তন করে  সরাসরি যুক্ত করা হয় জেলা প্রশাসনকে।

হাওরে বাঁধ নির্মাণের নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, নভেম্বরের মধ্যে সব প্রকল্প নির্ধারণ ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠনের কথা। স্থানীয়ভাবে কৃষক ও সুবিধাভোগীদের নিয়ে প্রতিটি প্রকল্পের জন্য একটি করে পাঁচ থেকে সাত সদস্যের প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করা হয়। বাঁধের মূল কাজ শুরু হওয়ার কথা ১৫ ডিসেম্বর। কাজের শেষ সময় ২৮ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু এ পর্যন্ত কোনো বছরই নির্ধারিত সময়ে বাঁধের কাজ শেষ করা যায়নি।

এ অবস্থায় পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানিয়েছেন, গতকাল প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক)  সভায় কিশোরগঞ্জ জেলার ১০ উপজেলায় নদীতীর প্রতিরক্ষা কাজ, হাওরের ঢেউ থেকে বাঁধ রক্ষা এবং খাল পুনঃখনন প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। সুনামগঞ্জ এবং নেত্রোকনায়ো এরকম প্রকল্প নেওয়া হবে।=এর আগে ‘বিশ্ব পানি দিবস ২০২২’ উপলক্ষে গত সোমবার (৪ এপ্রিল) রাজধানীতে  আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীকে বন্যার সঙ্গে বসবাস করার পদ্ধতি রপ্ত করার আহবান জানিয়েছেন।সরকারপ্রধান বলেন, বন্যার সঙ্গেই আমাদের বসবাস করতে হবে। বন্যাকেই আমাদের আপন করে নিতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ যাতে আমরা মোকাবেলা করতে পারি, সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে। বাঁধ নির্মাণের সঙ্গে সঙ্গে বৃক্ষরোপণ, যেখানে সড়ক নির্মাণ করব তার দুই পাশে বৃক্ষরোপণঅর্থাৎ বৃক্ষরোপণ করেই আমরা ভূমিধস থেকে মাটিগুলো সংরক্ষণ করতে পারি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করার জন্য এবং এ জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবেলা করার জন্য আমরা একটা পদক্ষেপ নিয়েছি। আমরা মুজিব ক্লাইমেট প্রসপারিটি প্ল্যান প্রণয়ন করছি এবং এসব বিষয়ে সেখানে বিশেষ নির্দেশনা দেয়া আছে।

ওদিকে, সুনামগঞ্জে হাওরের ফসল রক্ষায় জরুরি ভিত্তিতে বাঁধ সংস্কার ও নির্মাণসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহবান জানিয়েছেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।

মঙ্গলবার (৫ এপ্রিল ২০২২) গণমাধ্যমে প্রদত্ত এক যুক্ত বিবৃতিতে বাম জোটের নেতৃবৃন্দ বাঁধের প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে প্রয়োজনে সেনাবাহিনীর সহায়তা নেওয়ার পরামর্শ দেন। তারা বলেন, এখুনি পরিস্থিতি সামাল দিতে না পারলে হাওরের ফসল ২০১৭ সালের মত বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। এই পরিস্থিতি দেশে গুরুতর খাদ্য সংকট তৈরি করতে পারে।

নেতৃবৃন্দ বলেন, বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম, দূর্নীতি, ধীরগতি এবং সর্বোপরি তাদের কর্মকর্তা ও ঠিকাদারি সংস্থার স্বেচ্ছাচারীতার কারণে এখন হাওরের ফসল চরম ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। তারা উল্লেখ করেন, ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে হাওর রক্ষার সমস্ত কাজ শেষ হবার কথা থাকলেও তা শেষ হয়নি।নেতৃবৃন্দ অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করারও দাবি জানান। একই সাথে তারা হাওর রক্ষার বর্তমান অকার্যকরী আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনা পরিবর্তনেরও দাবি জানান।#



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

অন্যান্য বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৬ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই