বিস্তারিত বিষয়
বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস-২০২২
বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস-২০২২
[ভালুকা ডট কম : ৩১ মে]
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সদস্য রাষ্ট্রগুলো ১৯৮৭ সাল থেকে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস পালন করে আসছে। প্রতি বছর ৩১ মে বিশ্বজুড়ে দিবসটি পালন করা হয়। তামাকের স্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাবের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করানো এই দিবসের উদ্দেশ্য। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এবারের শ্লোগান- ‘টোব্যাকো : থ্রেট টু আওয়ার এনভায়রনমেন্ট’।
তামাক চাষ, তামাকজাত পণ্য উৎপাদন ও ব্যবহার এবং তামাকের বর্জ্য পরিবেশের জন্য কতটা ক্ষতিকর সে বিষয়ে জনসাধারণ এবং নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবছর দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে ‘টোব্যাকো: থ্রেট টু আওয়ার এনভায়রনমেন্ট’। তামাক কোম্পানি বছরে ৮৪ মিলিয়ন টন কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমণ, ৬ ট্রিলিয়ন সংখ্যক সিগারেট শলাকা উৎপাদনের জন্য ২২ বিলিয়ন টন পরিমাণ পানি অপচয় এবং ৬০ কোটি বৃক্ষ নিধনের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন, প্রাকৃতিক সম্পদ বিনষ্ট এবং ইকোসিস্টেম এ ব্যাপক ক্ষতিসাধন করছে। প্রতি বছর ৪.৫ ট্রিলিয়ন সিগারেট ফিল্টার আবর্জনা হিসেবে প্রকৃতিতে জমা হয়, যার ওজন প্রায় ৭ লক্ষ ৬৬ হাজার ৫৭১ মেট্রিক টন। ফেলে দেয়া বর্জ্য হিসেবে এটির অবস্থান শীর্ষে। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বিশ্বের ৯০ ভাগ তামাক উৎপাদন হয়, যার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম । বাংলাদেশে দিবসটি উদযাপিত হতে যাচ্ছে ‘তামাকমুক্ত পরিবেশ, সুস্বাস্থ্যের বাংলাদেশ’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে।
বাংলাদেশের পরিবেশ, অর্থনীতি এবং সমাজের ওপর তামাকের ক্ষতিকর প্রভাব ব্যাপক। বিশ্বের মোট তামাকের ১.৩ শতাংশ উৎপাদিত হয় বাংলাদেশে। আবাদযোগ্য জমিতে তামাক চাষের কারণে খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে রয়েছে। টোব্যাকো অ্যাটলাসের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের প্রায় ৩১ শতাংশ বননিধনের জন্য তামাক দায়ী। এছাড়া তামাক চাষে ব্যবহৃত অতিরিক্ত কীটনাশক ও সার বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে জলাশয়ে মিশে ক্ষতিগ্রস্ত করছে দেশের মৎস্য উৎপাদন। দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র হালদা নদী ইতোমধ্যে হুমকির মুখে পড়েছে।
বাংলাদেশেও সিগারেটের ফেলে দেয়া ফিল্টার পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০২০-২১ অর্থ বছরে দেশে মোট ৭১ বিলিয়ন সিগারেট শলাকা উৎপাদিত হয়েছে। সিগারেটের ফেলে দেয়া ফিল্টার প্রকৃতির সঙ্গে মিশে যেতে প্রায় এক দশক সময় নেয়, আর মিশে যাওয়ার সময় এ থেকে সাত হাজারেরও বেশি রাসায়নিক পদার্থ নির্গত হয়। কেবল সিগারেটই নয়, জর্দা, গুলের মতো ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্যগুলোও প্লাস্টিক কৌটা ও পলিথিন প্যাকেটে ভরে বিক্রি করা হয়, যা পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
তামাকের পরিবেশগত ক্ষতির আরেকটি বড় কারণ পরোক্ষ ধূমপান। বাংলাদেশের ৪ কোটিরও অধিক প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ বাড়িতে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হয়, যার সিংহভাগই নারী। আচ্ছাদিত কর্মস্থলে এবং গণ পরিবহণে যাতায়াতের সময় পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হয়, এমন ব্যক্তির সংখ্যা যথাক্রমে ৮১ লক্ষ এবং ২.৫ কোটি। ঢাকা শহরের প্রাথমিক বিদ্যালয়গামী শিশুদের ওপর পরিচালিত এক গবেষণায় শতকরা ৯৫ ভাগের মুখের লালাতে উচ্চ মাত্রায় নিকোটিন পাওয়া গেছে, যা মূলত পরোক্ষ ধূমপানের ফল। পরোক্ষ ধূমপান মৃত্যু ঘটায় এবং হৃদরোগ, ফুসফুসের ক্যানসারের মত মারাত্মক রোগের অন্যতম কারণ।
পরিবেশের ক্ষতির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত থাকার পরেও তামাক কোম্পানিগুলো নিজেদেরকে পরিবেশ বান্ধব হিসেবে উপস্থাপন করে তথাকথিত সামাজিক দায়বদ্ধতামূলক কর্মসূচির (সিএসআর) মাধ্যমে। তাদের সিএসআর কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে তামাক চাষের কারণে বিভিন্ন অঞ্চলে প্রাকৃতিক সম্পদ ও ইকোসিস্টেম এর ওপর যে বিরূপ প্রভাব পড়ছে, তা আড়াল করে রাখা। এর পাশাপাশি প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে ব্যবসায়িক স্বার্থ উদ্ধার করা।
তামাকের কারণে আমাদের আবাদযোগ্য জমি, বনভূমি, মৎসক্ষেত্র প্রভৃতি সীমিত প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর ব্যাপক চাপ পড়ছে। পরিবেশ, প্রতিবেশ, জলবায়ু এবং খাদ্য নিরাপত্তাকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে এই তামাক। সরকারের উচিৎ হবে শক্তিশালী আইন ও কর পদক্ষেপের মাধ্যমে তামাকের আগ্রাসন বন্ধ করা।তামাকের বহুমুখী ক্ষতির প্রভাব থেকে সুরক্ষার জন্য অবিলম্বে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করে ‘ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান’ বিলুপ্তসহ সকল পাবলিক প্লেস, কর্মক্ষেত্র ও পাবলিক পরিবহনে শতভাগ ধূমপানমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিতকরণ এবং তামাক কোম্পানির ‘সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচি’ বা সিএসআর কার্যক্রম সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করতে হবে। পাশাপাশি, সুনির্দিষ্ট এক্সাইজ কর আরোপের মাধ্যমে সিগারেটসহ সকল তামাক পণ্যের দাম বৃদ্ধি, তামাক চাষ নিরুৎসাহিত এবং বিকল্প ফসল চাষে উৎসাহিত করতে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ ( বিএটিবি)-তে সরকারের বিদ্যমান বিনিয়োগ প্রত্যাহার করতে হবে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে ৩৫.৩ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠী তামাক ব্যবহার করে। তামাকজনিত রোগে প্রতিবছর ১ লক্ষ ৬১ হাজারের অধিক মানুষ মারা যায়। গ্লোবাল বারডেন অব ডিজিজ স্টাডি, ২০১৯ এর তথ্য অনুযায়ী দেশে মৃত্যু এবং পঙ্গুত্বের প্রধান চারটি কারণের একটি তামাক। তামাক ব্যবহারের অর্থনৈতিক ক্ষতির (চিকিৎসা ব্যয় এবং উৎপাদনশীলতা হারানো) পরিমাণ বছরে ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা।#
সতর্কীকরণ
সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।
কমেন্ট
অন্যান্য বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
-
নওগাঁয় খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার এমপি [ প্রকাশকাল : ২৭ মে ২০২৩ ০৪.৪০ অপরাহ্ন]
-
ভোলার তজুমদ্দিনে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী [ প্রকাশকাল : ২৬ মে ২০২৩ ০৫.০৩ অপরাহ্ন]
-
মনপুরায় তিন মাস ধরে নেই ইউএনও [ প্রকাশকাল : ২০ মে ২০২৩ ০১.১০ অপরাহ্ন]
-
রবীন্দ্র জয়ন্তীতে অ-ব্যস্থাপনার দায় স্বীকার [ প্রকাশকাল : ১৯ মে ২০২৩ ০১.৪০ অপরাহ্ন]
-
নওগাঁয় মন্ত্রী আ,ক,ম মোজাম্মেল হক [ প্রকাশকাল : ০৮ মে ২০২৩ ১২.১০ পুর্বাহ্ন]
-
কবিগুরুর ১৬২তম জন্মবার্ষিকী [ প্রকাশকাল : ০৫ মে ২০২৩ ০২.০০ অপরাহ্ন]
-
অদৃশ্য খুঁটির জোরে কর্মস্থলে ২৭ বছর [ প্রকাশকাল : ০৪ মে ২০২৩ ০২.০০ অপরাহ্ন]
-
বেনাপোল বন্দরে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ [ প্রকাশকাল : ০১ মে ২০২৩ ০১.১৩ অপরাহ্ন]
-
ফুলে ফুলে ছেঁয়ে গেছে ডিসির বাংলো প্রাঙ্গন [ প্রকাশকাল : ০১ মে ২০২৩ ০১.০০ অপরাহ্ন]
-
টানা ৫ দিনের ছুটির কবলে বেনাপোল স্থলবন্দর [ প্রকাশকাল : ১৯ এপ্রিল ২০২৩ ০২.০৫ অপরাহ্ন]
-
রায়গঞ্জে লোডশেডিংয়ে জনজীবন বিপর্যস্ত [ প্রকাশকাল : ১৯ এপ্রিল ২০২৩ ০২.০০ অপরাহ্ন]
-
ব্যতিক্রমী উদ্যোগ দালাল ছাড়াই মিলছে সেবা [ প্রকাশকাল : ১৮ এপ্রিল ২০২৩ ০৭.৩০ অপরাহ্ন]
-
নান্দাইলে লোডশেডিংয়ে জনজীবন অতীষ্ট [ প্রকাশকাল : ১৭ এপ্রিল ২০২৩ ০৩.০০ অপরাহ্ন]
-
দুই পক্ষের দ্বন্দ্বে আলোর মুখ দেখছে না প্রকল্প [ প্রকাশকাল : ১৪ এপ্রিল ২০২৩ ১২.৩০ অপরাহ্ন]
-
খাজনা খারিজের নামে গলাকাঁটা ফি আদায় [ প্রকাশকাল : ১০ এপ্রিল ২০২৩ ০১.৪০ অপরাহ্ন]