বিস্তারিত বিষয়
অদৃশ্য খুঁটির জোরে কর্মস্থলে ২৭ বছর
অদৃশ্য খুঁটির জোরে কর্মস্থলে ২৭ বছর
[ভালুকা ডট কম : ০৪ মে]
সরকারি চাকুরী বিধি মোতাবেক প্রাণিসম্পদ হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারী একই কর্মস্থলে ৩ বছরের বেশি অধিক চাকরি করার কোন বিধান নেই। তবে অনিয়মকেই "অদৃশ্য খুঁটির জোরে নিয়মে পরিণত করে ৩ বছরের স্থলে টানা ২৭ বছর ও ৮ বছর একই কর্মস্থলে চাকরি করছেন নান্দাইল প্রাণি সম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালের উপ-সহকারী (স্বাস্থ্য) মো. মোকসেদ আলী ও উপ-সহকারী (সম্প্রসারণ) কর্মকর্তা মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন।
হাসপাতালটিতে সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষও যেন ত্যক্তবিরক্ত এই দুই কর্মকর্তায়। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, এক জায়গাতেই দীর্ঘদিন চাকরির সুবাদে অফিসের সব কিছু নিজের কব্জায় রেখে নানা দুর্নীতি, অনিয়ম করে যাচ্ছেন। তবে, এমন খবরে নড়েচড়ে বসেছেন বিভাগীর প্রাণি সম্পদ অফিস। জানিয়েছেন, তদন্ত করে খুব দ্রুতই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ওষুধ কোম্পানির মাসোহারা বুঁদ দুই উপ-সহকারী খোঁজ নিয়ে জানাযায়, নান্দাইল উপজেলা প্রাণি সম্পদ ও ভেটেরিনারি দপ্তরে উপ-সহকারী (স্বাস্থ্য) মো. মোকসেদ আলী ২০১৫ সালে নান্দাইলে যোগদান করে। কম্পাউন্ডার মোকসেদ আলী নামে পরিচিত এই কর্মকর্তা প্রতিটি প্রেসক্রিপশনেই নিম্ন মানের একাধিক কোম্পানির ওষুধ লিখে থাকেন। এমনকি একই প্রেসক্রিপশনে একই গ্রুপের ওষুধ তিনি একাধিক কোম্পানির লিখে থাকেন। বিনিময়ে ওষুধ কোম্পানিগুলো থেকে প্রতিমাসে পেয়ে থাকেন মোটা অঙ্কের মাসোহারা।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সকাল থেকে সারাদিন তার পিছনে অন্তত ১০-১৫টি ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা ঘুরাঘুরি করেন। ওষুধের মান নিম্নমানের হলেও তাদের প্রত্যেকেই সাধ্যমতো খুশি রাখেন মোকসেদ। এছাড়াও নিম্নমানের কোম্পানি সাইনো ও কেমিকোর সাথে পার্টনারশীপ ব্যবসা ও একই কোম্পানির ওষুধপত্র প্রেসক্রিপশন করেন তিনি। হাসপাতালটিতে কর্মরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মচারী জানান, উপ-সহকারী মোকসেদ অফিসের যাবতীয় কাগজপত্র প্রস্তুত করান সাইনো কোম্পানির প্রতিনিধি দিয়ে, যা রীতিমতো অন্যায়। দীর্ঘ দিন যাবতই তিনি এমন কর্মকা- পরিচালনা করে আসছেন। ফলে অফিসের গোপনীয় বিষয় ও কাগজপত্র কোম্পানির প্রতিনিধি হাতে চলে যাচ্ছে।
অন্যদিকে উপজেলা প্রাণি সম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালের উপ-সহকারী (সম্প্রসারণ) কর্মকর্তা মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন ১৯৯৪ সালে নান্দাইলে যোগদান করেন। যোগদান করে একাধারে দীর্ঘ ১৪ বছর চাকুরী করেন। পরবর্তীতে ২০০৮ সালে পার্শ্ববর্তী তাড়াইল উপজেলায় বদলি হন। দুই বছর না যেতেই ২০১০ সালে আবারও নান্দাইলে যোগদান করেন। এর পর থেকেই নান্দাইল উপজেলা প্রাণি সম্পদ দপ্তরে সম্প্রসারণ কর্মকর্তা পদে নিযুক্ত আছেন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি অফিসের কার্যক্রমে কেমিকো কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি দিয়ে বিভিন্ন এলাকায় টাকার বিনিময়ে চিকিৎসা সেবা দেন। তাছাড়াও প্রেসক্রিপশন করা বিধান না থাকলেও তিনি দীর্ঘ সময় ধরে প্রেসক্রিপশন করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষও ত্যক্তবিরক্ত দুই কর্মকর্তায় ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের সাথে অতিরিক্ত সখ্যতা এবং মানহীন ওষুধের প্রেসক্রিপশনে সাধারণ মানুষও যেন ত্যক্ত-বিরক্ত নান্দাইল প্রাণি সম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালের দুই উপ- সহকারী কর্মকর্তার ওপর। ক্ষোভ প্রকাশ করে হাসপাতালটিতে সেবা নিতে আসা চন্ডিপাশা গ্রামের চাঁন মিয়া বলেন, হাসপাতালের পশু চিকিৎসক মোকসেদ আলী নিম্নমানের কোম্পানির ঔষধ লিখেন। কিন্তু বাধ্য হয়েই আমাদেরকে এসব ওষুধ কিনে নিতে হয়। যদিও সেগুলো কোন কাজ করে না। তাছাড়া প্রেসক্রিপশনেও তিনি কি যে আঁকা-বাকা লেখা লিখেন, কিছুই বুঝা যায় না। অনেক সময় দোকানদার লেখা বুঝতে না পেরে ভুল ওষুধ দিয়ে দেয়। তিনি বলেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যে মোকসেদ আলীকে নান্দাইল থেকে সড়িয়ে দিলে নান্দাইলের মানুষ অনেক উপকৃত হবে। কারণ, তিনি গুরুত্বপূর্ণ চেয়ারে বসে শুধুমাত্র কোম্পানিগুলো থেকে টাকা নিয়ে পকেটই ভাড়ি করছেন।
উপজেলার ঘোষপালা গ্রামের হিমেল মিয়া নামে আরেক সেবা প্রত্যাশি বলেন, হাসপাতালে গরু বাছুর নিয়ে আসলেও ঠিকমতো ডাক্তার পাই না। শুনেছি হাসপাতালের কর্মকর্তা জসিম ডাক্তার বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে টাকার বিনিময়ে চিকিৎসা সেবা দেয়। আমরা যারা গরিব মানুষ টাকা দিতে পারি না বলে আমাদের কাছে যায় না। অভিযোগ প্রসঙ্গে যা বলছেন দুই উপসহকারী কর্মকর্তা অভিযোগের বিষয়ে উপসহকারী কর্মকর্তা মোকসেদ আলীর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার সামনে কোম্পানির প্রতিনিধি বসে থাকলে তো আমি উঠিয়ে দিতে পারি না। তাদের চলে যেতে বললেও যায় না। আমি কী করব? তাই বাধ্য হয়েই সবার ওষুধ লিখি।
এদিকে, হাসপাতালের উপ-সহকারী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন মুঠোফোনে বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যদি মনে করে তাহলে এক জায়গায় থাকা যায়। আমি সব সময় সম্প্রসারণ কাজে নিজেকে জড়িয়ে রাখি। তারমধ্যে যতটুকু সময় পাই প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা দেই। তবে টাকার বিনিময়ে কিছু করি না। ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস বিভাগীর প্রাণি সম্পদ দপ্তরের এ বিষয়ে জানতে চাইলে নান্দাইল উপজেলা প্রাণি সম্পদ দপ্তর কর্মকর্তা মো. হারুনর রশীদকে অফিসে গিয়ে পাওয়া যায়নি। গত চার দিন যাবত মোবাইল ফোনে একাধিক বার কল দিলেও কল রিসিভ করেননি। এবিষয়ে ময়মনসিংহ বিভাগীর প্রাণি সম্পদ দপ্তরের পরিচালক ডাঃ মনোরঞ্জন দর মুঠোফানে বলেন- একজন কর্মকর্তা দীর্ঘদিন একই কর্মস্থলে থাকতে পারে না। বিষয়টি আগে জানা ছিল না। খোঁজ নিয়ে সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।#
সতর্কীকরণ
সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।
কমেন্ট
অন্যান্য বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
- InshaAllah we will meet again [ প্রকাশকাল : ০৪ জুন ২০২৪ ০২.০০ অপরাহ্ন]
- ভালুকায় কৃষি মন্ত্রী আব্দুস শহীদ [ প্রকাশকাল : ০২ মে ২০২৪ ০৩.০০ অপরাহ্ন]
- বেনাপোল হুমকির মুখে আমদানি বাণিজ্য [ প্রকাশকাল : ২২ এপ্রিল ২০২৪ ১২.৩৫ অপরাহ্ন]
- দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোরে [ প্রকাশকাল : ২০ এপ্রিল ২০২৪ ০২.১২ অপরাহ্ন]
- বার বছর ভুয়া শিক্ষক নিবন্ধন সনদে চাকরি [ প্রকাশকাল : ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ১২.৩০ অপরাহ্ন]
- সাংবাদিককে সহযোগিতা করায় বদলী [ প্রকাশকাল : ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ১২.০০ অপরাহ্ন]
- ঈদ যাত্রায় আইজিপির আহবান [ প্রকাশকাল : ০৪ এপ্রিল ২০২৪ ১২.০০ অপরাহ্ন]
- সাতচল্লিশ বছরের খাজনা চল্লিশ টাকা [ প্রকাশকাল : ৩১ মার্চ ২০২৪ ০৬.৫০ অপরাহ্ন]
- সংস্কারের কয়েক মাস না যেতেই খানা খন্দ [ প্রকাশকাল : ৩০ মার্চ ২০২৪ ০৭.৩০ পুর্বাহ্ন]
- নওগাঁয় কলেজ ফান্ডের টাকা লোপাট করলেন ইউএনও [ প্রকাশকাল : ২২ মার্চ ২০২৪ ০১.১৩ অপরাহ্ন]
- গুরু শিষ্যের প্রেমময় জীবন [ প্রকাশকাল : ১৬ মার্চ ২০২৪ ০১.০২ অপরাহ্ন]
- নওগাঁয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন [ প্রকাশকাল : ১০ মার্চ ২০২৪ ০৫.০০ অপরাহ্ন]
- ঝুঁকিপূর্ণ ঘর নিয়ে বিপাকে প্রকল্পের বাসিন্দারা [ প্রকাশকাল : ০৮ মার্চ ২০২৪ ০১.৪০ অপরাহ্ন]
- অনুমোদন ছাড়াই চলছে প্রাণিসম্পদ ব্যাংক [ প্রকাশকাল : ০৪ মার্চ ২০২৪ ০৪.০০ অপরাহ্ন]
- আশ্রয়ণের ঘর নির্মাণে নয়-ছয় [ প্রকাশকাল : ০৩ মার্চ ২০২৪ ০১.১০ অপরাহ্ন]