তারিখ : ২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

সংগ্রামী জনপ্রতিনিধি খোদেজা খাতুন

সংগ্রামী জনপ্রতিনিধি খোদেজা খাতুন সুস্থ হয়ে ফিরে আসুন
[ভালুকা ডট কম : ০৭ জুলাই]
প্রতীক্ষার প্রহর যেন কাটে না। আর সে প্রতীক্ষা যদি হয় কোন জনপ্রিয় জনপ্রতিনিধির জন্য তবে তো কথাই নেই। তার জন্য শুধু সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার বারুহাস ইউনিয়নের জনসাধারণই নয়, প্রতীক্ষা করছেন স্থানীয় প্রশাসন, সংবাদকর্মীরা ও স্থানীয় জাতীয় সংসদ সদস্যও। কবে তিনি সুস্থ্য হয়ে এলাকায় ফিরবেন। এই মানুষটি হচ্ছেন তাড়াশ উপজেলার বারুহাস ইউনিয়নের সংরক্ষিত নারী ইউপি সদস্য জনপ্রতিনিধি খোদেজা খাতুন। বারুহাস ইউনিয়নের সংরক্ষিত নারী আসনের বিনসাড়া ৭, চৌবাড়িয়া ৮ ও কুসুম্বী ৯ নং ওয়ার্ডের তিনি দ্বিতীয়বার নির্বাচিত নারী ইউপি সদস্য। তিনি এখন চিকিৎসাধীন আছেন বগুড়া শহিদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউ এ।

খোদেজা খাতুন (৬৫) গত ১২ জুন রবিবার সন্ধ্যায় হোটেলে দিনমজুরের কাজ শেষ করে বাড়ি যাওয়ার সময় তাড়াশ-রানীরহাট আঞ্চলিক সড়কে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে বগুড়া শহিদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন। বৃহস্পতিবার তাকে আইসিইউ এ নেওয়া হয়। বগুড়া শহিদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ও নিউরো সার্জন বিভাগের প্রধান ডা. সুশান্ত কুমার সেনের প্রদত্ত তথ্যে জানাগেছে, সড়ক দুর্ঘটনার কারণে মাথায় আঘাত লেগে ব্রেইন থেতলে গেছে ইউপি সদস্য খোদেজা খাতুনের। বাম হাতের কব্জির ওপরের জোড়া হাড়ের একটি ভেঙ্গে গেছে। এছাড়া শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছিলা, ফুলা ও জখম রয়েছে। গত রবিবার তার মাথার আরেকবার সিটি স্ক্যান করে দেখা হয়েছে। ব্রেইনের আঘাতপ্রাপ্ত স্থানে রক্তক্ষরণ নেই। রক্তক্ষরণ হলে অপারেশন করতে হত। তিনি আগের থেকে এখন কিছুটা সুস্থ। অল্প কথাবার্তা বলতে পারছেন। ব্রেইনের আঘাতজনিত কারণে দীর্ঘ মেয়াদে ওষুধ খেতে হবে। ডা. সুশান্ত কুমার সেনের মতে, তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, অথবা নিউরো সায়েন্স হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে পারলে ভালো হত।

তার দ্রুত সুস্থ্যতার জন্য এলাকার জনগণ কায়মনবাক্যে প্রার্থনা করছেন। কারণ ইউপি সদস্য নির্বাচিত হয়েও খোদেজা খাতুন হোটেলের থালা-বাসন মেজে জীবিকা নির্বাহ করেন। ইউনিয়ন পরিষদে মিটিংয়ের দিন হোটেল থেকে ছুটি নিয়ে মিটিংয়ে যোগ দেন। কখনো কোন দায়িত্বে তিনি অবহেলা করেননি। ইউপি সদস্যের হোটেল শ্রমিকের কাজ করে নির্লোভ জীবনযাত্রা নির্বাহ করা সততার এক উজ্জল দৃষ্টান্ত স্বরূপ দেখছেন এলাকার জনসাধারণ। মোছা. খোদেজা খাতুনের বাড়ি বারুহাস ইউনিয়নের বিনসাড়া গ্রামে। তার স্বামীর নাম মো. আবু তাহের। ঐ গ্রামে মণি পুকুর পাড়ে এক চালাঘরে (ছাপড়া) তার বসবাস। বিদ্যুৎ ও স্যানিটেশন সুবিধা নেই বাড়িতে। এতদিন সুস্থ ছিলেন, সব মানিয়ে নিয়েছেন। তার সংশয় এখন আর হয়তো পুরো শারীরিক সক্ষমতা ফিরে পাবেন না। নেই তার সঞ্চয় বা সহায় সম্বল। হাসপাতাল থেকে ফিরে কীভাবে চলবেন এটাই তার এখন বড় দুশ্চিন্তা। দৈনিক ১৫০ টাকা মজুরিতে হোটেলের থালা-বাসন মাজার কাজ করে সংসার চলতো। তিন মাস অন্তর ১০ হাজার ৮০০ টাকা যে সম্মানী ভাতা হিসেবে পেতেন, তা অসহায় মানুষের জন্যই খরচ করতেন।

এখন যে অবস্থা তা হলো, খোদেজা খাতুন একেতো বয়স্ক মানুষ তার উপর দুর্ঘটনায় তার শারিরীক মানসিক যে ক্ষতি হয়েছে তা আর পুরণ হবার নয়। তিনি আর আগের মত পারবেন না নিজেকে চালিয়ে নিতে। তার কাছে আর এতটা আশা করাও ঠিক নয়। বরং সমাজের কাছে এখন তার পাওনা বিশ্রাম ও শান্তিময় জীবনযাত্রার নিশ্চয়তা। প্রয়োজন তার এখন নিরাপদ আশ্রয় ও নিশ্চিন্ত সম্মানজনক জীবনযাত্রা। তাই খোদেজা খাতুনের পাশে দাঁড়ানো সকল ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নিকট প্রার্থনা, অনুগ্রহ করে তার জন্য একটি বসবাস উপযোগী বাড়ি ও সম্মানজনক জীবিকার ব্যবস্থা করুন।

খোদেজা খাতুন নিরবিচ্ছিন্ন এক সংগ্রামী মানুষের নাম। টানা পঞ্চাশ বছরের সংগ্রামী জীবন তার। তার বাবা বিনসাড়া গ্রামের কেতাব আলী মোল্লা, মায়ের নাম আকালি বেগম। শৈশবকালে তিনি বিনসাড়া হাফিজিয়া কওমীয়া মাদ্রাসায় পড়া লেখা করেছেন। বাংলা লেখা পড়াও তিনি জানেন।  ১৫ বছর বয়সে বিয়ে হয় তাড়াশ ইউনিয়নের খুটিগাছা গ্রামের চাঁদ আলীর ছেলে আবু তাহেরের সাথে। স্বামীর সংসারে আসার পর থেকেই শুরু হয় তার জীবনের কঠোর কঠিন সংগ্রাম। বিবাহিত জূীবনে তিন ছেলে আসে খোদেজার কোল জুড়ে। স্বামী আবু তাহের সংসারী মানুষ ছিলেন না। সংসারের প্রতি কোন দায়িত্ব কর্তব্য পালন না করায় গৃহবধু খোদেজা খাতুন নিজেকে তৈরি করেন কঠিন প্রত্যয়ে। তিনি বাড়ি বাড়ি কাজ করে কখনো বা মাঠে কৃষাণ মজুরের কাজ করে যা রোজগার করতেন তাই দিয়ে স্বামীসহ তিন সন্তানের ভরণ পোষণ চালাতেন।

ছেলেদের ইসলামী শিক্ষায় মানুষের মত মানুষ করতে মাদ্রাসায় ভর্তি করে দেন। মেঝ ছেলে খিজির কোরআনে হাফেজ। বড় ছেলে খোয়াজ ও ছোট ছেলে খাজানুর কোরআন শিক্ষার পাশাপাশি বাংলা লেখা পড়াও জানে। দারুন অর্থ সংকটের কারণে ইচ্ছা থাকলেও ছেলেদের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করতে পারেননি। তবে সারাজীবন তিনি সত্য ও ন্যায় নিষ্ঠার সাথে জীবন যাপন করেছেন। কখনো ক্লান্তিকে প্রশ্রয় দেননি। তার সততায় মুগ্ধ এলাকাবাসী তাকে নির্বাচনে দুই বার দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন। নির্বাচনের যাবতীয় খরচ এলাকাবাসী সম্মিলিত ভাবে বহন করেছেন। এবং দুই বারই তাকে বিপুল ভোটে সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্য পদে জয়ী করেছেন। আর খোদেজা খাতুনও তার এলাকার কোন মানুষের বিপদ আপদে কখনোই বসে থাকেননি। সর্বদা তাদের পাশে থেকে সেবা দিয়ে গেছেন। নিজের সম্মানী ভাতার অর্থও তাদের জন্য ব্যয় করেছেন। আর একারণেই খোদেজা খাতুন এলাকাবাসীর এত প্রিয়।

দেশে যখন কতিপয় জনপ্রতিনিধির নানা কুকীর্তির খবর প্রায়শ্চ সংবাদপত্রের পাতায় প্রকাশ হচ্ছে। এমন একটি সময়ে খোদেজা খাতুনের মত নির্লোভ হত দরিদ্র জনপ্রতিনিধির অপুর্ব জনসেবা ও নীতি নিষ্ঠতার যে সব তথ্য আমরা পাচ্ছি তা সত্যি বিরল, অনুকরণীয় ও অতীব প্রসংশনীয় বিষয় বটে।

সর্বশেষ তথ্যে জানাগেছে খোদেজা খাতুনের চিকিৎসার জন্য তাড়াশের ইউএনও মো. মেজবাউল করিম ও এক চিলতে হাসি ফাউন্ডেশন এনজিও যেটুকু অর্থ সহায়তা করেছেন তা প্রায় শেষের দিকে।  তবে আশার কথা, জানাগেছে, খোদেজা খাতুনের উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন হলে তার যথাযথ ব্যবস্থা করতে প্রস্তুত আছেন সিরাজগঞ্জ-৩ আসনের মাননীয় জাতীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা ঃ আব্দুল আজিজ ও দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার মাননীয় সম্পাদক তাসমিমা হোসেন। তাঁরা খোদেজা খাতুনের সার্বিক অবস্থার নিয়মিত খোঁজ খবর রাখছেন। তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও অনন্ত অভিনন্দন। অভিনন্দন তাদের প্রতি যারা খোদেজা খাতুনের পাশে দাঁড়িয়েছেন।  #



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

নারী ও শিশু বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৬ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই